নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রকৃতি, জনজীবন, চাষাবাদ—প্রায় সবই নদীনির্ভর। তাই বলা হয়, নদী না বাঁচলে দেশও বাঁচবে না। কিন্তু নদী বাঁচাতে আমরা কী করছি? নদীর ওপর আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে নদীর প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। নদী ভরাট করে স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে উচ্চ আদালত নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করেছেন। শ্বাস রোধ করে মানুষ হত্যা করার মতোই বাঁধ দিয়ে নদীর প্রবাহ রোধ করা একই ধরনের অপরাধ। নদী রক্ষায় অনেক আইনও রয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার গুদারাঘাট এলাকায় খীরু নদীর ওপর মাটি ফেলে সড়ক নির্মাণ করছেন কয়েকজন মাটি ব্যবসায়ী। ১০-১২ ফুট উচ্চতার এ সড়ক নির্মিত হলে নদীর প্রবাহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাবে। উজানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। শত শত কৃষক সর্বস্ব হারাবে।
শুধু খীরু নদী নয়, একই অবস্থা আরো অনেক নদীর। এর আগে প্রকাশিত এক খবর থেকে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত আড়িয়ালখাঁ নদের ওপর মাত্র পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে পাঁচটি বাঁধ দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো বাঁধের ওপর ইট বিছিয়ে সড়ক বানানো হয়েছে।
অনেক জায়গায় নদীর জায়গা দখল করে স্থাপনা করা হচ্ছে। নদীতে বাঁধ দিয়ে প্রভাবশালীরা মাছ চাষ করছে। সবচেয়ে বেশি হচ্ছে নদী ভরাট করে সড়ক তৈরি। খবরের সঙ্গে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, খীরু নদীর অর্ধেকটা ভরাট করা হয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজন বাধা দিলেও মাটি ব্যবসায়ীরা তা শোনেননি। ট্রিপল নাইনে ফোন করা হলে ভালুকা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মাটি ভরাট করতে নিষেধ করে যায়। কিন্তু তারা চলে যাওয়ার পরই আবার ভরাট শুরু হয়।
ইউনিয়ন পরিষদের নিষেধও তাঁরা অগ্রাহ্য করেছেন। তাঁদের এত শক্তির উৎস কী? স্থানীয় প্রশাসন এত নির্বিকার কেন? আইন, উচ্চ আদালতের নির্দেশ কোনো কিছু বাস্তবায়নের কোনো দায়িত্বই কি তাদের নেই? অবশ্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জানান, বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে ভরাট করা মাটি দ্রুত সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু শুধু মাটি সরিয়ে নিতে বলাটা যথেষ্ট কি? নদী ভরাট করা সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ। জড়িতদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি নয় কি?
আমরা চাই, খীরু নদীতে থাকা বাঁধ অবিলম্বে অপসারণ করা হোক। পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের ভূমিকা পালন করুক। নদীর আর কোথাও কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা অপসারণ করে নদী নাব্য করা হোক।