দীর্ঘদিনের অবহেলা, উপযুক্ত তদারকির অভাব, সমন্বয়হীনতা এবং স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িতদের অনৈতিকতা, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ও পরিচালিত সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবার যে দুরবস্থা তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। সরকারি হাসপাতালগুলোর এমন অব্যবস্থাপনা ও দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য ক্লিনিক ও হাসপাতাল। এগুলোর একটি বড় অংশেরই সরকারি অনুমোদন নেই।
অভিযোগ রয়েছে, এগুলোতে স্বাস্থ্যসেবার ন্যূনতম মানও রক্ষিত হয় না। এগুলোর একমাত্র কাজ রোগীদের পকেট কাটা। সরকার মাঝেমধ্যেই এসব ক্লিনিক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। সিলগালা বা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিছুদিন পরই দেখা যায়, ভিন্ন নামে আবার সেগুলো ক্লিনিক ব্যবসা চালাতে থাকে। সম্প্রতি আবারও অভিযান শুরু হয়েছে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, দেশব্যাপী চলতি অভিযানে এ পর্যন্ত এক হাজার ৭০০ অবৈধ ক্লিনিক ও হাসপাতাল বন্ধ করা হয়েছে। এতে এই অবৈধ ও মানহীন স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ হবে কি?
সরকার স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে জেলা, উপজেলায় হাসপাতাল পরিচালনার পাশাপাশি ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তুলেছে। ঢাকার বাইরেও বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা সম্প্রসারিত হচ্ছে। প্রতিটি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের সঙ্গে আধুনিক ও মানসম্মত হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে। এগুলোতে সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হলে মানুষকে অবৈধ বা নামসর্বস্ব এসব ক্লিনিকে দৌড়াতে হতো না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সরকারি হাসপাতালগুলোতে মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না। অভিযোগ আছে, অনেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক থাকেন না বললেই চলে, এক্স-রে বা অন্যান্য মেশিন অকেজো হয়ে থাকে, অ্যাম্বুল্যান্স বিকল থাকে, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের নানা ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। মানুষ তখন বাধ্য হয় নামসর্বস্ব ক্লিনিকে যেতে। দেখা যায়, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে অনিচ্ছুক চিকিৎসকরাই সেসব ক্লিনিকে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
শুধু অনুমোদনহীন ক্লিনিক নয়, অনুমোদনপ্রাপ্ত ক্লিনিকের চিকিৎসার মান নিয়েও রয়েছে বহু প্রশ্ন। কিছুদিন আগে করোনা পরীক্ষার সার্টিফিকেট দেওয়া নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছিল। জানা যায়, অনুমোদনপ্রাপ্ত অনেক ক্লিনিকও ভুয়া সার্টিফিকেট বিতরণ করেছে। অনেক ক্লিনিকের বিরুদ্ধে রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ আছে। অর্থ আদায়ে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আছে। অনেক ক্লিনিক বা হাসপাতালে আইসিইউ বা অন্যান্য জরুরি সেবা প্রদানের যেসব ব্যবস্থা রয়েছে, সেগুলোর মান নিয়েও প্রশ্ন আছে। কাজেই শুধু অনুমোদনহীন ক্লিনিক বা হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই হবে না, সব ধরনের ক্লিনিক বা হাসপাতালে প্রদত্ত চিকিৎসাসেবার মান নিয়েও অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসাসেবার মান উন্নয়ন ও সুযোগ সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের ২৫টি বিভাগে মাত্র ২০০ টাকার বিনিময়ে বৈকালিক স্পেশালাইজড আউটডোর সেবা দেওয়া হচ্ছে। এতে অনেক রোগী সেবা পাচ্ছে। এমন ব্যবস্থা সারা দেশের সব সরকারি হাসপাতালে করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি সব চিকিৎসাসেবার মান নিশ্চিত করতে হবে।
The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/djav