যাত্রী নিরাপত্তা, সাশ্রয়ী পরিবহন, যাত্রীপ্রতি পরিবেশদূষণ অত্যন্ত কম হওয়াসহ নানা কারণে সারা দুনিয়ায় গণপরিবহন হিসেবে ট্রেনের কদর বাড়ছে। বাংলাদেশেও যোগাযোগ ব্যবস্থায় রেলপথের অবদান ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু এখনো রেলপথে অনেক সমস্যা রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনাগত সমস্যাও বিদ্যমান।
ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রেনের গতিও অনেক কম। এসব কারণে রেলওয়ে পরিবহন এখনো সেভাবে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সমীক্ষায়ও রেলওয়ের বহুবিধ সমস্যার চিত্র উঠে এসেছে।এর মধ্যে আছে রেলপথের মান নষ্ট হওয়া, লাইনে পর্যাপ্ত পাথর না থাকা, মাটি সরে যাওয়া, স্লিপার নষ্ট হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এসব কারণে প্রায় অর্ধেক রেলপথেই ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চালাতে হয়। তাতে সময় বেশি লাগে, ঘটে দুর্ঘটনা।নিকট অতীতে দেশের রেলপথ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিল। শিডিউল বিপর্যয় চরমে উঠেছিল। দেশের অনেক রেলপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পুরনো মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চালানো যাচ্ছিল না। বগিরও স্বল্পতা ছিল। গত দেড় দশকে সেই স্থান থেকে রেল পরিবহনকে অনেকটাই স্বাভাবিক পর্যায়ে তুলে আনা হয়েছে।
সিঙ্গল গেজ রেলপথকে ডুয়াল গেজ করা হচ্ছে। নতুন অনেক ইঞ্জিন কেনা হয়েছে। উন্নত মানের বগি আমদানি করা হয়েছে। পুরনো রেলপথ মেরামতের পাশাপাশি নতুন নতুন রেলপথ স্থাপিত হচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া বহু স্টেশন নতুন করে চালু করা হয়েছে। লোকবল বাড়ানো হয়েছে। তার পরও রেল পরিবহনে সমস্যার অন্ত নেই। জরিপে উঠে এসেছে দেশের যে ৪৩টি জেলায় বর্তমানে রেলপথ চালু রয়েছে, তার মধ্যে ৩৯টি জেলার রেলপথেই সমস্যা রয়েছে।দেখা যায়, দেশে যত ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে তার ৯০ শতাংশই ঘটে লাইনচ্যুতির কারণে। লাইনে পাথর না থাকা, বৃষ্টিতে নিচের মাটি সরে যাওয়া, স্লিপার ভেঙে যাওয়াসহ নানা কারণে এমন দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণেও ঘাটতি থাকছে। রেললাইন থেকে ক্লিপ, নাটবল্টু চুরি হয়ে যায়। সময়মতো সেগুলো প্রতিস্থাপন করা হয় না।আবার অনেক রেল সেতু অত্যন্ত পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে, গতি কমছে। আবার সংকেত ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং মানুষের ভুলের কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ও এই দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। জানা যায়, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের বহুমাত্রিক উন্নয়নে দুটি প্রকল্প প্রস্তুত করা হচ্ছে।প্রকল্পের উদ্দেশ্য দুর্ঘটনা হ্রাস, যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি, পণ্য পরিবহন বাড়ানো এবং রেলওয়ের রাজস্ব আয় বাড়ানো। প্রকল্প দুটির ব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজার কোটি টাকার বেশি। কিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে। সেসব প্রকল্পের কাজ যথাসম্ভব দ্রুতগতিতে এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে। সারা দুনিয়ার মতো আমাদেরও রেলপথের উন্নয়নে আরো মনোযোগ দিতে হবে। সে জন্য রেলপথের নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। রেল পরিবহনকে আধুনিক ও গতিশীল করতে হবে।