মা যদি সুস্থ ও সবল হন, তাহলে তাঁর সন্তানও সুস্থ-সবল হবে—সাধারণভাবে এটাই মনে করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম এমন বিবাহিত নারীদের কত শতাংশ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী? আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সাম্প্রতিক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী এক কোটি ৭০ লাখ বিবাহিত নারী রয়েছেন, যাঁরা অপুষ্টিজনিত দ্বৈত স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। এই সংখ্যা মোট বিবাহিত নারীর ৪৪.৭৩ শতাংশ। তাঁদের বড় একটি অংশের উচ্চতার তুলনায় ওজন বেশি রয়েছে।
অন্য অংশটির উচ্চতার তুলনায় ওজন কম রয়েছে। তাঁদের কোনো অংশই সুষম পুষ্টির অধিকারী নয়।
২০১৭-১৮ সালে পরিচালিত গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে এসে দেখা যায়, নারীদের ওজন স্বল্পতাজনিত অপুষ্টি অনেকটা কমেছে। ২০০৭ সালে উচ্চতার তুলনায় কম ওজনের নারী ছিলেন ২৬ শতাংশ। ২০১৭ সালে তা কমে ১১ শতাংশ হয়েছে। তাঁদের সংখ্যা ৫০ লাখের মতো। অন্যদিকে ২০০৭ সালে উচ্চতার তুলনায় স্থূলকায়া নারীর সংখ্যা ছিল ১৭ শতাংশ, ২০১৭ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৩৫ শতাংশ। তাঁদের সংখ্যা প্রায় এক কোটি ২০ লাখ। উচ্চতার তুলনায় ওজন বেশি এমন নারীর সংখ্যা বাড়লেও তাঁদের শরীরে সুষম পুষ্টির যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
এই স্থূলকায়া নারীদের মধ্যে অসংক্রামক রোগ, বিশেষ করে ডায়াবেটিস, হৃদরোগের মতো অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও বেশি। অথচ এসব নারী প্রতিবছর ১৪ লাখ শিশুর জন্ম দিচ্ছেন, যে শিশুদের অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। অন্যদিকে মায়ের কাছ থেকে বিভিন্ন রকম রোগ নিয়ে জন্মানোর ঝুঁকিও বেশি থাকে। সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হলো যে নারীদের মধ্যে স্থূলতার প্রবণতা বাড়লেও সুষম পুষ্টির হার কিন্তু কমছে। ২০০৭ সালে সুপুষ্টির হার ছিল ৫৮ শতাংশ, যা ২০১৭ সালে এসে দাঁড়ায় ৫৬ শতাংশ। অথচ বাস্তবে এই হার আরো বৃদ্ধি পাওয়া উচিত ছিল।
বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী পাঁচ লাখের মতো শিশু মারাত্মক ধরনের অপুষ্টিতে ভোগে এবং প্রায় ২০ লাখ শিশু মাঝারি মাত্রার অপুষ্টিতে ভোগে। ৫২ শতাংশের বেশি শিশু রক্তস্বল্পতায় ভোগে। নারীদেরও ৫০ শতাংশের বেশি রক্তস্বল্পতায় ভোগে। এক হিসাবে দেখা যায়, অপুষ্টিজনিত কারণে বাংলাদেশের উৎপাদনশীলতা প্রতিবছর ১০০ কোটি ডলারের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অপুষ্টিজনিত সমস্যার প্রধান শিকার হয় মা ও শিশুরা। পুষ্টি সমস্যার সমাধানে সরকার কিছু উদ্যোগ নিলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। এ জন্য পুষ্টি শিক্ষা ও সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। একই সঙ্গে সুষম পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/kr41
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন