English

30.3 C
Dhaka
মঙ্গলবার, জুলাই ১৫, ২০২৫
- Advertisement -

সফলতার সনদ বঞ্চনা: ডবল জিপিএ পেয়েও ফেল সোয়া লাখ

- Advertisements -
দুটি জিপিএ ৫! নিঃসন্দেহে এক বিরল সাফল্য। অথচ সেই শিক্ষার্থীটি আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে দিশাহারা। এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম নয়। একেবারে সোয়া লাখ।
প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ইউনিটে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য মোট তিন লাখ দুই হাজার ৬০৬ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেন। ডবল জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক লাখ ৪১ হাজার ৯৪।
বিজ্ঞান ও কলা ইউনিটে পাস করা শিক্ষার্থী ১৮ হাজার ৭৪৭ জন, যদিও উত্তীর্ণদের সবাই ডবল জিপিএ ৫ পাওয়া নন। তবে জিপিএ ৫ পাওয়া দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও প্রায় এক লাখ ২১ হাজার ডবল জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ফেল করেছেন।
এটিই কি তাহলে আমাদের জিপিএ ৫ গর্বিত শিক্ষা অর্জনের ফল? যে শিক্ষার্থী দেশের এক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ গ্রেড তুলেছেন, সেই শিক্ষার্থীর জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা বন্ধ। এ এক ভয়ানক ব্যর্থতা। এ কেবল ভর্তি প্রক্রিয়ার নয়, এটি একটি গভীর নীতিগত বিচ্যুতির চিহ্ন। আমরা ফলের হার বাড়িয়েছি, ফলভোগের কাঠামো তৈরি করিনি।
সরকার প্রতিবছর ‘রেকর্ড জিপিএ ৫’ পাওয়াকে সাফল্যের শিরোনাম হিসেবে উপস্থাপন করে। প্রশ্ন হচ্ছে, যখন সেই ‘রেকর্ডধারীরা’ বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা পান না, তখন এই সাফল্য কার? শিক্ষা কি কেবল পরীক্ষার ফলাফলে সীমাবদ্ধ, নাকি এটি একটি পরিপূর্ণ সামাজিক কাঠামো, যেখানে শেখা, সুযোগ এবং ভবিষ্যৎ সবই থাকে পরস্পর সম্পর্কিত? সত্যটি হলো, আমরা আমাদের শিক্ষাকে সংখ্যায় গুনছি, গুণমানে নয়। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আসনসংখ্যা বাড়েনি, অথচ জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে হু হু করে। ভর্তিপ্রক্রিয়ার ডিজিটাল পদ্ধতি থাকলেও তার নীতিমালায় অস্পষ্টতা ও অসামঞ্জস্য রয়েছে। এসব সংকটের দায় শিক্ষার্থীদের নয়।
এই ব্যর্থতাকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করাই আমাদের নীতিনির্ধারকদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।এখনই সময় শিক্ষা খাতে গত্বাঁধা চর্চা ভেঙে বাস্তবভিত্তিক সমাধানে যাওয়া। জিপিএ ৫ কেন্দ্রিক লোক-দেখানো সাফল্য থেকে নীতিনির্ধারকদের মুখ ফেরাতে হবে। শিক্ষার প্রকৃত সাফল্য যদি শিক্ষার্থীরা উপভোগ করতে না পারেন, জিপিএ ৫ যদি তাঁকে পরবর্তী গন্তব্যে পৌঁছতে, উচ্চশিক্ষা অর্জনে কোনো ভূমিকা না রাখতে পারে, তবে সেই পাসের হারের পরিসংখ্যান আসলে কার মঙ্গল ডেকে আনে!

পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ভর্তি নীতিমালায় আনতে হবে স্বচ্ছতা ও সময়োপযোগী পুনর্গঠন। বদলাতে হবে আমাদের মানসিক কাঠামোও। ‘ভালো ফল মানেই ভালো ভবিষ্যৎ’—যদি এই ধারণা সমাজে গেঁথে দিয়ে থাকি, তবে সেই ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজন সঠিক পথ, সহায়ক পরিবেশ এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিশ্রুতি। শিক্ষার্থীদের শুধু সফলতার কাগজ ধরিয়ে নয়, তাদের সামনে সুযোগের দরজাও খুলে দিতে হবে।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/q3wm
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন