English

37 C
Dhaka
শনিবার, মে ১০, ২০২৫
- Advertisement -

সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ প্রয়োজন: অনিশ্চয়তার আবর্তে অর্থনীতি

- Advertisements -
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি দেশের অর্থনীতির নাজুক পরিস্থিতিকে আরো প্রকট করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় রাখা এবং বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য এই ঋণের অপরিহার্যতা স্পষ্ট। অন্যদিকে আইএমএফের কঠিন শর্তাবলি, বিশেষত মুদ্রা বিনিময় হারকে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব সরকারকে গভীর চিন্তায় ফেলেছে।

এই পরিস্থিতিতে ঋণপ্রাপ্তির অনিশ্চয়তা এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক দুর্বলতা—এই দুইয়ের সমন্বয়ে দেশের অর্থনীতি এক কঠিন গোলকধাঁধায় পড়েছে।

সরকার আইএমএফের শর্তাবলি একবারে মেনে না নিয়ে ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের কৌশল নিয়েছে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পুনর্বিন্যাসে কিছুটা অগ্রগতি হলেও মুদ্রা বিনিময় হারের প্রশ্নে কিছুটা অচলাবস্থা রয়েছে। সরকারের ভাষ্য মতে, এই মুহূর্তে ডলারের দাম সম্পূর্ণরূপে বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগতে পারে।

স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য ১০০ কোটি ডলারের একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তবে আইএমএফের পক্ষ থেকে এখনো কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। শেষ পর্যন্ত সমঝোতা না হলে ঋণপ্রাপ্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাবে। আর আইএমএফের ঋণপ্রাপ্তিতে বিলম্ব বা ব্যর্থতা অন্যান্য দাতা সংস্থার ঋণপ্রবাহকেও বাধাগ্রস্ত করতে পারে। আন্তর্জাতিক ঋণমানকারী সংস্থাগুলোর নেতিবাচক মূল্যায়নে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আস্থার সংকট তৈরি করতে পারে।
অন্যদিকে অর্থনীতির ভেতরের চিত্র আরো উদ্বেগজনক। রেমিট্যান্স বা প্রবাস আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধি কিছুটা স্বস্তি দিলেও উৎপাদন ও রপ্তানি খাতের দুর্বলতা সুস্পষ্ট। বিনিয়োগের অভাব এবং ব্যবসায়ীদের হতাশা অর্থনৈতিক সংকটকে আরো ঘনীভূত করছে। রাজস্বের বেশির ভাগ অর্থই ব্যয় হচ্ছে ঋণের সুদ পরিশোধে।পুঁজিবাজারের দীর্ঘমেয়াদি মন্দা এবং নিত্যপণ্যের বাজারের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।গ্যাসসংকটের কারণে শিল্পোৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে রপ্তানি আয়ে।

এই দ্বিমুখী চাপে দেশের অর্থনীতি এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন। আইএমএফ ঋণের অনিশ্চয়তা যেমন বহিরাগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে, তেমনি অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাগুলো সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাকে আরো কঠিন করে তুলছে। শুধু বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভর করে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন সম্ভব নয়।

সরকারকে এখন অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি, রপ্তানি বহুমুখীকরণ এবং বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং শিল্প খাতের সমস্যা সমাধানে দ্রুত মনোযোগ দেওয়া অপরিহার্য। নীতি সহায়তা এবং সুশাসনের অভাবে বেসরকারি খাত যে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে, তা অর্থনীতির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি বড় হুমকি।

সরকারকে একদিকে যেমন আইএমএফের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাতে হবে, তেমনি অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। কাঠামোগত সংস্কার এবং নীতিগত পরিবর্তন ছাড়া অর্থনীতির এই অনিশ্চয়তার আবর্ত থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হবে। সময়োপযোগী এবং বাস্তবসম্মত পদক্ষেপের মাধ্যমেই দেশের অর্থনীতিকে একটি স্থিতিশীল ও টেকসই ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন