দেশে করোনা সংক্রমণ কমে গিয়েছিল। নমুনা বিবেচনায় দৈনিক শনাক্তের হার ১ শতাংশের নিচে নেমে গিয়েছিল। ‘করোনা নাই’ মনে করে মানুষ মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি প্রায় বাদই দিয়েছিল। এর মধ্যে নতুন শঙ্কার জানান দিচ্ছে কভিড-১৯ ভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের উপধরন বিএফ-৭।
এই উপধরনটি ওমিক্রনের তুলনায় চার গুণেরও বেশি দ্রুত ছড়াচ্ছে। চীনে এর ভয়াবহ বিস্তার শুরু হয়েছে। ভারতেও পাওয়া গেছে এই উপধরনটি। রবিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চীন থেকে চার চীনা নাগরিকের করোনা ধরা পড়েছে। সেটি বিএফ-৭ কি না তা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
কভিড-১৯ ভাইরাসের স্বভাবটাই এমন। দ্রুত রূপ বদলায়। যেন শক্তি সঞ্চয় করে নতুন রূপে আক্রমণে নামে। আমাদের মনে রাখতে হবে, করোনা মহামারি কমলেও এটি শেষ হয়ে যায়নি। এটি একসময় কমে, একসময় বাড়ে। এ রকম ঢেউ এর মধ্যে বেশ কয়েকবারই দেখা গেছে। করোনা এখনো যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, এশিয়ার মধ্যে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ায় যথেষ্ট প্রবলভাবেই আছে।
চীনে ব্যাপক বিধি-নিষেধ আরোপ করে সংক্রমণের তীব্রতা অনেকটাই দমিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু বিধি-নিষেধে অতিষ্ঠ মানুষ ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু করায় কর্তৃপক্ষ বিধি-নিষেধ প্রায় তুলেই নেয়। তারপরই শুরু হয় সংক্রমণের ব্যাপকতা। চীন এখন তথ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। তার পরও নানা সূত্রে যেটুকু খবর আসে তাতে জানা যায়, শুধু জেঝিয়াং প্রদেশেই দৈনিক সংক্রমণ ১০ লাখের কাছাকাছি চলে গেছে। চীন এখন উঠেপড়ে লেগেছে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। ভারতেও দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণ।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশও আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে কভিড সতর্কতা মেনে চলার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরগুলোতে হেলথ স্ক্রিনিং জোরদার করতে বলা হয়েছে। কিন্তু প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, স্থলবন্দরগুলোতে সেসব নির্দেশনা ঠিকমতো মানা হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন উপধরনটি বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। তাঁদের মতে, মানুষকে আবারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য উৎসাহিত করা প্রয়োজন। যারা এখনো টিকা নেয়নি তাদের দ্রুত টিকা প্রদান করতে হবে। বয়স্ক এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগ আছে এমন মানুষকে দ্রুত চতুর্থ ডোজ টিকা প্রদান করা প্রয়োজন। চীনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন। কঠোর লকডাউন বা বিধি-নিষেধে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে, মানুষের জীবন-জীবিকা ও দেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার বেপরোয়া চালচলনও চরম ভোগান্তির কারণ হয়। প্রাণহানি বাড়ে। তাই রাষ্ট্রকে যেমন যুক্তিসংগত বিধি-নিষেধ আরোপ করতে হবে, মানুষকেও অনেক বেশি সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবীতেই এখনো করোনা মহামারির ঝুঁকি বিদ্যমান। তাই যারা এখনো টিকা নেয়নি তাদের অবশ্যই টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে। টিকা দিলেও শতভাগ প্রতিরোধ সম্ভব হয় নয়। উন্নত দেশে প্রায় শতভাগ টিকা দেওয়ার পরও সংক্রমণের ব্যাপকতা দেখা যায়। তাই টিকা নেওয়ার পরও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার করাসহ স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলতে হবে।