জনস্বার্থে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন হলে জমি অধিগ্রহণ করতে হয়। কিন্তু কোনো অবস্থায়ই অধিগ্রহণ বা ক্ষতিপূরণ না দিয়ে প্রকল্পে ব্যক্তিগত জমি নিয়ে নেওয়া যায় না। অথচ চট্টগ্রামের পটিয়ায় তেমনটাই ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেখানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন সেচ প্রকল্পের খাল পুনঃখনন করতে গিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিনা নোটিশে মানুষের কৃষিজমি, গাছপালা ও বসতঘর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে।
এ নিয়ে এলাকাবাসী বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে। গত ৩০ জানুয়ারি হাইকোর্টেও একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। ওই দিনই শুনানি শেষে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর দ্বৈত বেঞ্চ ৩০ দিনের মধ্যে সরকারি বিধি মেনে পিটিশন নিষ্পত্তি করতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে আদেশ দেন। কিন্তু খাল খননের কাজ বন্ধ হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বা পাউবো সূত্রে জানা যায়, পটিয়ার জলাবদ্ধতারোধ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পটি গত বছরের ৪ এপ্রিল একনেক সভায় পাস হয়। ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১০০ কোটি ৫৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ সময় ২০২৪ সালের জুন মাস।
এর আওতায় উপজেলার গরুলুটা খাল, কেরিনজা খাল, চৌধুরী আহলা খাল ও জঙ্গলখাইন খালসহ প্রায় ৯ কিলোমিটার খাল পুনঃখননের কাজ চলছে প্রায় দুই মাস ধরে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাবর-জামান (জেভি) কাজটি বাস্তবায়ন করছে। বাবর-জামানের মালিক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেছেন, যাঁরা রিট করেছেন, তাঁদের জমি বাদ দিয়ে বর্তমানে বেলখাইন এলাকার গরুলুটা খালের অবশিষ্ট অংশের কাজ চলছে।
এটি সুবিচার নয়। সবার পক্ষে রিট করা সম্ভব নয়। তাই বলে অধিগ্রহণ না করে বা ক্ষতিপূরণ না দিয়ে তাঁদের জমি প্রকল্পে নিয়ে নেওয়া কোনো মতেই কাম্য নয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাসুদ কামাল জানিয়েছেন, তাঁরা এখনো হাইকোর্টের আদেশের কপি হাতে পাননি। তবে তিনি স্বীকার করেন, তাঁরা জমি জবরদখলের অভিযোগ পেয়েছেন। তিনি বলেন, অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ ছাড়া এক ইঞ্চি জমিও নেওয়ার সুযোগ কারো নেই। বাস্তবে তার পরও খাল পুনঃখননের কাজ চলমান রয়েছে।
আমরা আশা করি, জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে এবং স্থানীয়দের অভিযোগগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে। অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত খাল পুনঃখননের কাজ বন্ধ রাখা হবে, এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।