গাজীপুরের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে লাগামহীন দখলবাজির ভয়াবহ চিত্র কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, যা শুধু উদ্বেগজনক নয়, বরং রাষ্ট্রের সুরক্ষা ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতার পরিচায়ক। গত আট মাসে যেভাবে প্রভাবশালী চক্র বনভূমির ওপর ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে, তা বন বিভাগের নীরব দর্শকের ভূমিকা অথবা যোগসাজশকেই স্পষ্ট করে তোলে।
পাঁচ হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা তৈরি হলেও সরকারি তালিকায় তিন হাজারের কম জবরদখলকারী দেখানো এবং তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ বিষয়টিকে আরো গুরুতর করে তুলেছে।
বনভূমি দখলের এই মহোৎসবে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করা হয়েছে, যা স্থানীয় জীববৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, বন বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রত্যক্ষ মদদেই এই অবৈধ কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এমনকি অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে জবরদখলকারীদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগও সামনে এসেছে।
রাজেন্দ্রপুর ও কালিয়াকৈরসহ বিভিন্ন রেঞ্জের বনভূমিতে যেভাবে প্রভাবশালীরা রাতারাতি স্থাপনা তৈরি করেছে এবং পরবর্তীতে তালিকা তৈরির সময় তাদের নাম কৌশলে বাদ দেওয়া হয়েছে, তা বন বিভাগের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা দুর্নীতিবাজ চক্রের স্বরূপ উন্মোচন করে।
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বনাঞ্চলেও ৭০০-এর বেশি অবৈধ স্থাপনা তৈরি হয়েছে।
কয়েক দফা উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও কয়েক শ স্থাপনা এখনো বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, তালিকা তৈরির পরও নতুন করে দখল হওয়ায় কিছু নাম বাদ পড়তে পারে, তবে মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বন দখলের সুযোগ দিয়ে কিছু অসাধু কর্মকর্তা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এবং এমনকি এর পুরস্কারস্বরূপ ভালো পদও বাগিয়ে নিয়েছেন।
বন বিভাগের মূল কাজ হলো দেশের বনজ সম্পদ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা।