বাংলাদেশে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা অনেক পুরনো। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে যৌতুকের কারণে হরহামেশাই নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও নারী সংগঠনগুলোর আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন পাস হয়েছে। কিন্তু আমরা সেই আইনের সুফল কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।
পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড উভয় বিধানই রাখা হয়েছে, কিন্তু এর পরও নারীর প্রতি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। পারিবারিক সদস্যদের দ্বারা কোনো নারী নির্যাতন বা সহিংসতার শিকার হলে তাকে সুরক্ষা দিতেই আইনটি করা হয়েছে।
বাংলাদেশে নারীর অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। রাজনীতি থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং চাকরিক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা ও অবদান আজ অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু পারিবারিক নির্যাতন ও সহিংসতার মাত্রা আমাদের সমাজে উদ্বেগজনক হারেই বাড়ছে। বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন উল্লেখ করে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে পারিবারিক কলহের জেরে বিভিন্ন বয়সের ২৫৩ জন নারী খুন হয়েছেন।
এর আগে সংস্থাটি বছরের প্রথম তিন মাসের প্রতিবেদনে পারিবারিক সহিংসতায় ৬৬ জন নারী ও ৩১ শিশু খুন হওয়ার তথ্য জানিয়েছিল। সে অনুযায়ী মাসে গড়ে ২২ নারী খুন হন। চলতি মাসের প্রথম সাত দিনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১৯ জন নারী-পুরুষ ও শিশু স্বজনদের হাতে খুন হয়েছে। এর মধ্যে বাবার হাতে সন্তান ও সন্তানের হাতে মা-বাবা খুন হওয়ার ঘটনাও রয়েছে। স্বামীর হাতে স্ত্রী ও স্ত্রীর হাতে স্বামী খুনের একাধিক ঘটনা ঘটেছে।
এসব প্রতিবেদন থেকে এটা স্পষ্ট যে পারিবারিক সহিংসতা বাড়ছে। অথচ আমাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু পরিবার। সেই পরিবারে যখন সহিংস আচরণ ঘটে তখন শুধু পরিবারই নয়, সমাজেও তার প্রভাব পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক সহিংসতা বাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ পারিবারিক বন্ধন শিথিল হওয়া। নানা কারণে পরিবারে স্বজনদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। পরিণতিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাও ঘটছে।
পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবারকে সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু ভেবে সব সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে। সেই সঙ্গে আইনের যথাযথ প্রয়োগ সমাজে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করবে।