English

29.8 C
Dhaka
মঙ্গলবার, জুলাই ১৫, ২০২৫
- Advertisement -

আমূল সংস্কার করতে হবে ছাত্ররাজনীতি

- Advertisements -
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, এমনকি সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান—প্রতিটি আন্দোলনে সাফল্যের পেছনে রয়েছে ছাত্ররাজনীতির অবদান। কিন্তু পরবর্তীকালে নেতিবাচক ছাত্ররাজনীতির কারণে আমাদের শিক্ষাঙ্গনের পবিত্রতা নানাভাবেই কলুষিত হচ্ছে। শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। ছাত্ররাজনীতির ফাঁদে পড়ে সম্ভাবনাময় অনেক তরুণ শিক্ষার পথ থেকে বিচ্যুত হচ্ছে।
নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তারা নিজের জীবন ধ্বংস করছে। দরিদ্র মা-বাবার স্বপ্নকে হত্যা করছে। পরিবারকে ঠেলে দিচ্ছে সামাজিক গ্লানির দিকে। ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে বহু শিক্ষার্থী প্রতিবছর প্রাণ হারায়।
সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৯ দফা দাবির মধ্যে একটি দফা ছিল লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা বলছেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ না করে ছাত্ররাজনীতি সংস্কার করা প্রয়োজন। তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে যে ভীতি রয়েছে, তা কেটে যাবে।
গত শনিবার দিনব্যাপী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে এক বৈঠকে ছাত্ররাজনীতি সংস্কারের বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা। বৈঠকে ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ না করে ছাত্ররাজনীতি সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবেশ ছাত্ররাজনীতিকেও দূষিত, নীতিভ্রষ্ট ও বিষাক্ত করে। আদর্শের বদলে বিত্তবৈভবের প্রবল আকর্ষণ নীতিচ্যুত করে। দুই সামরিক শাসক মেধাবী ছাত্রদের একাংশকে কাছে টেনে নিতেও সক্ষম হয়।
তাদের হাতে সহপাঠী বা মানুষ হত্যার রক্তের ছাপ। ডাকসুর সোনালি যুগের, কি জাতীয়তাবাদী, কি প্রগতিবাদী ছাত্ররাজনীতির জায়গা দখল করেছে এমন এক নৃশংস রাজনীতি।
এই অবস্থার আমূল পরিবর্তন দরকার। পূর্ব ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ থাকতে হবে। সেই সঙ্গে আপৎকালীন জাতীয় সমস্যা নিয়ে ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীন রাজনীতি করবে, যেখানে থাকবে আদর্শ, ন্যায়নীতি, নৈতিকতা ও সুস্থ মানবিক মূল্যবোধ। শিক্ষায়তনের পরিবেশ সুস্থ, মানবিক ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি প্রয়োজন সুস্থ ধারার ছাত্ররাজনীতি।
নেতিবাচক ছাত্ররাজনীতির কারণে আমাদের শিক্ষাঙ্গনের পবিত্রতা নানাভাবেই কলুষিত হচ্ছে। ফলে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছাত্ররাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন যদি না থাকে, তাহলে কারো আপত্তি করার কথা না। রাজনীতি থেকে দুর্বৃত্তায়ন দূর করতে হবে। তাঁদের মতে, রাজনৈতিক সুঠাম নেতৃত্ব আশা করতে হলে ছাত্ররাজনীতির ভূমিকা অস্বীকার করা চলবে না।
তাঁরা মনে করেন, ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে এক ধরনের বিতৃষ্ণা আছে সমাজে। এই বিতৃষ্ণাকে অতিক্রম করতে হবে। ছাত্ররাজনীতির নামে অপরাজনীতি বন্ধ করতে হবে এবং নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির ওপর যে বাধা সেটি অপসারণ করে দিতে হবে। ছাত্ররাজনীতির নামে শিক্ষার পরিবেশে বিঘ্ন ঘটে এমন কোনো কার্যক্রম মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। ছাত্র নেতৃত্বে আসবে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্ররা।
দেশ ও দশের স্বার্থেই ছাত্ররাজনীতিকে কলুষমুক্ত করতে হবে। তবে সমস্যাটির শিকড় এত গভীরে চলে গেছে যে সমাধানে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে এবং তাদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশিত। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তুলতে নানামুখী কর্মসূচি নিতে হবে, বাড়াতে হবে সুস্থ বিনোদন ও খেলাধুলার সুযোগ। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রসংসদ সক্রিয় করতে হবে। বছরের পর বছর হলো ছাত্রসংসদ নির্বাচন বা ডাকসু, রাকসু, জাকসু—এগুলোর নির্বাচন হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলোর যদি নিয়মিতভাবে নির্বাচন করা হতো, তাহলে তার মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব সৃষ্টি হতো। তাঁদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/b8w8
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন