English

26 C
Dhaka
বুধবার, এপ্রিল ১৭, ২০২৪
- Advertisement -

উপযুক্ত বিচার হতে হবে: গাড়িচাপায় মৃত্যু

- Advertisements -

নানা ব্যবস্থা নেওয়ার পরও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে দেশজুড়ে। এর মধ্যে এমন অনেক দুর্ঘটনা ঘটে, যেগুলোকে দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকাণ্ডও বলা যায়। লাইসেন্সহীন অদক্ষ চালকের হাতে, এমনকি অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকের হাতে গাড়ির চাবি তুলে দেওয়া হয়। বহু ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল করে রাস্তায়।

অনেক চালক রাত-দিন গাড়ি চালান। বেপরোয়া গতি, প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানো, গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইল ফোনে কথা বলাসহ বহু অনিয়মের কারণেও রাস্তায় মৃত্যুর মিছিল লেগেই আছে।
আমাদের দেশে চালকদের বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় তাঁঁদের অনেকেই আধুনিক সড়ক নির্দেশনা বুঝতে অক্ষম। ফলে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে যায়। কিন্তু যখন একজন শিক্ষিত মানুষ রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটান, তখন? যেমন—একটি ঘটনা ঘটেছে গত শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগ এলাকায়। সেখানে একটি প্রাইভেট কারের ধাক্কায় মোটরসাইকেল থেকে রাস্তায় পড়ে যান রুবিনা নামের এক গৃহবধূ। তাঁর কাপড় আটকে যায় গাড়ির চাকায়। গাড়িচালক তাঁকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান সেখান থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত। পথচারীরা গাড়ি থামাতে চিৎকার করলেও ওই শিক্ষক থামাননি, বরং গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেন। গাড়িটির চালক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক সহযোগী অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের কাছ থেকে কি এটা আশা করা যায়? রুবিনা গত ডিসেম্বরে হারিয়েছেন তাঁর স্বামীকে, জানুয়ারিতে হারিয়েছেন তাঁর শ্বশুরকে। এর আগের বছর জানুয়ারিতে মারা যান তাঁর দেবর। তাঁর একমাত্র ছেলেটি একেবারেই একা হয়ে গেল। একটি পরিবার তছনছ হয়ে গেল। অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া এক কিশোরের জীবন ঢেকে গেল অন্ধকারে। শেষ ভরসার স্থল মাকেও হারাল কিশোরটি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় শাহবাগ থানায় সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার ঘটনাটিকে ‘সড়ক দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড’ বলে মন্তব্য করেন। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রুবিনার মৃত্যুর ঘটনায় সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করা হয়েছে। এতে গাড়িচালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সাবেক শিক্ষককে আসামি করা হয়েছে। গণপিটুনিতে আহত শিক্ষককে আটক করা হয়েছে।

একই দিন যশোরের মণিরামপুরে মহাসড়ক লাগোয়া একটি খাবারের দোকানে কাভার্ড ভ্যান ঢুকে পড়ায় বাবা-ছেলেসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। মণিরামপুর থানার ওসি জানিয়েছেন, কাভার্ড ভ্যানটি জব্দ করা হলেও চালক ও সহযোগী পালিয়ে গেছেন।

যে দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে, তা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। দুর্ঘটনায় যেমন প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে, তেমনি অনেক পরিবার পথে বসছে। নিকট অতীতে আমরা দেখেছি, দেশের অনেক প্রতিভাবান মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন সড়ক দুর্ঘটনায়। বড় কোনো সড়ক দুর্ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নেও আন্তরিকতার পরিচয় পাওয়া যায়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২০১৬ সালে প্রায় ১৬ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। পঙ্গুত্ববরণ করে তিন লাখের বেশি মানুষ। এ অবস্থায় সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করতে হলে শক্তিশালী সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন দরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের সড়ক যোগাযোগকে নিরাপদ করতে হলে জাতিসংঘ প্রণীত গাইডলাইন অনুসারে সড়ক নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

রাজধানী ঢাকা ও যশোরের মণিরামপুরে গাড়িচাপা দুর্ঘটনা নয়, ‘হত্যা’। এ অপরাধের উপযুক্ত বিচার হওয়া দরকার। দৃষ্টান্ত স্থাপন করা গেলে এ ধরনের অপরাধ কমে আসবে।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন