এ সময়ে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে নতুন ঋণের টাকায় পুরনো ঋণের কিস্তি শোধ করা ছিল ‘দরবেশ’খ্যাত সালমান এফ রহমানের প্রিয় কাজ। এখন সেই মডেল অনুসরণ করে দেদার ঋণ পাচ্ছেন রাজশাহীভিত্তিক নাবিল গ্রুপের এমডি আমিনুল ইসলাম স্বপন।
প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নাবিল গ্রুপের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের ঋণ হাতিয়ে নেওয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। গ্রুপটি অভিনব কায়দায় জালিয়াতির মাধ্যমে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যার বেশির ভাগই বেনামি।
এ ছাড়া আরো চার হাজার কোটি টাকা ঋণের মধ্যে নানা ধরনের অনিয়ম পাওয়া গেছে। এই প্রক্রিয়ায় ইসলামী ব্যাংক থেকে আরো ৮০০ কোটি টাকার নতুন ঋণ নিয়ে পুরনো ঋণের কিস্তি পরিশোধের অভিযোগ পাওয়া গেছে গ্রুপটির বিরুদ্ধে। সাধারণত ঋণ দেওয়ার আগে জামানত বন্ধক রাখা হলেও এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে আগে ঋণ দেওয়া হয়েছে, পরে দায়সারাভাবে নামমাত্র জামানত নেওয়া হয়েছে। এমনকি ঋণের টাকা দিয়ে খোলা এফডিআরও ঋণের জামানত হিসেবে বন্ধক রাখা হয়েছে, যা নজিরবিহীন।নাবিল গ্রুপের এই জালিয়াতিতে ব্যাংক কর্মকর্তারা সহায়তা করেছেন বলেও অভিযোড় রয়েছে। এই জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া টাকা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জমি কেনার কাজে লাগানো হয়েছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ। আশার কথা, নাবিল গ্রুপের নানা ধরনের জালিয়াতির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও সিআইডি তদন্ত করছে।এই ঘটনা বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের গভীরে প্রোথিত দুর্বলতা ও অনিয়মকে আরো একবার সামনে নিয়ে এসেছে।রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী কিভাবে পুরো আর্থিক ব্যবস্থাকে জিম্মি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে, তা এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়।
এটা খুবই আশঙ্কার বিষয় যে এই জালিয়াতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ শেষ পর্যন্ত বিদেশে পাচার হয়েছে বলেও ধারণা করা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারকে এই মুহূর্তে অর্থনীতির পাশাপাশি রাজনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমেও ব্যাংকিং খাতকে সংস্কার করতে হবে। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরানোর উদ্যোগের পাশাপাশি খেলাপি ঋণ আদায় এবং দুর্বল ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য সুনির্দিষ্ট কৌশলপত্র প্রণয়ন করতে হবে।
অনিয়মের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংককে তার স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করতে হবে।