যেমনটি আশঙ্কা করা হয়েছিল, ঠিক তেমনটিই বোধ হয় ঘটতে যাচ্ছে দেশের বাজারে। প্রতিবছর রোজার আগে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, নিত্যপণ্যের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। বাজারে পণ্য মূল্যবৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। কিন্তু বাংলাদেশের দুর্বল বাজার ব্যবস্থাপনার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীকে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে দেখা যায়।
কোনো কোনো সময় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। হয়তো এরই ধারাবাহিকতায় এবারও রোজা সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে।
সচরাচর এখানে দাম বাড়ানোর জন্য অনেক ক্ষেত্রেই কোনো উপলক্ষ প্রয়োজন পড়ে না। একটি অদৃশ্য সিন্ডিকেটের কথা শোনা যায়। এই সিন্ডিকেট বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করে এমন কথাও চালু আছে। দেশের মুরগির বাজারে সেই অদৃশ্য সিন্ডিকেটের প্রভাব পড়েছে বলে সন্দেহ খোদ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের। পোলট্রি খাতে জড়িত সব পক্ষের অংশগ্রহণে এক মতবিনিময়ে বলা হয়েছে, করপোরেটদের একটি সিন্ডিকেট মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।
মুরগি উৎপাদনকারী বড় করপোরেট, পাইকার আর খুচরা ব্যবসায়ী—তিন পক্ষই মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা করছে। বাজারে এখন ব্রয়লার মুরগি যে দামে বিক্রি হচ্ছে উৎপাদন খরচ তার অর্ধেকের কাছাকাছি। বড় করপোরেটদের একটি সিন্ডিকেট চালের বাজারেও সক্রিয় বলে অভিযোগ আছে। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সুগন্ধি চালের বাজার এখন পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে দেশের বড় বড় গ্রুপ।
ধানের মৌসুমে এসব কম্পানি বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ ধান কিনে মজুদ করে। পরে তারা সুবিধামতো সময়ে প্যাকেটজাত করে যোগসাজশে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে। সব কম্পানি নতুন করে সুগন্ধি চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। একই অবস্থা চিনির বাজারে। আমদানি করার পরও কমেনি চিনির দাম।
গত জানুয়ারিতে সচিবালয়ে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের পঞ্চম সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ভোক্তা অধিকার সক্রিয় রয়েছে। রমজানে দাম নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। রমজানে দাম নিয়ন্ত্রণে একসঙ্গে পুরো মাসের পণ্য না কেনার আহ্বানও জানিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এটাও বাজারের একটি প্রবণতা।
এখানে ভোক্তাদেরও ভূমিকা রয়েছে। পণ্যের দাম বেড়ে যাবে এমন আশঙ্কা থেকে রমজান মাস আসার আগেই অনেকে এসব পণ্যের ছোটখাটো মজুদ গড়ে তোলে। এতে হঠাৎ করে বাজারে চাহিদা বেড়ে যায় এবং ব্যবসায়ীরা এই বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন।
রোজার মাসকে কেন্দ্র করে অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা নতুন কোনো ঘটনা নয়। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এর পেছনে ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার অনৈতিক ইচ্ছা যেমন দায়ী, তেমনি দায়ী বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর উদ্যোগের অভাব।
বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবি খোলাবাজারে কিছু পণ্য বিক্রির যে উদ্যোগ নেয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। গত বৃহস্পতিবার থেকে ফ্যামিলি কার্ডধারী নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য পণ্য বিপণন শুরু করেছে টিসিবি। টিসিবির এই উদ্যোগ বাজারে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
আমরা চাই সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। মনিটরিংয়ের মাধ্যমে লাগাম টানতে না পারলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। রোজায় নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে এখনই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।