বিরূপ বিশ্বপরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি যে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের অর্থনীতিতে এর ধাক্কাও লেগেছে। পুরনো শ্রমবাজার বন্ধ হচ্ছে। নতুন শ্রমবাজারে দেখা যাচ্ছে না আশার আলো। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস জনশক্তি রপ্তানি। সবচেয়ে বড় বাজার মধ্যপ্রাচ্য ক্রমেই গুটিয়ে আসছে। নতুন বাজার সৃষ্টিতে সাফল্য নেই।
তার পরও করোনাকালে রেকর্ড রেমিট্যান্স আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছে। কিন্তু কালের কণ্ঠে গতকাল প্রকাশিত একটি খবর অন্য রকমভাবে নজর কেড়েছে। খবরে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপের কর্মযজ্ঞ শুরু হওয়ার পর অন্তত এক হাজার ১৮ জন বাংলাদেশি শ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের এই মৃত্যুর কারণ তদন্ত করতেও ব্যর্থ হয়েছে কাতার। এমন অনেক পরিবার আছে, যারা তাদের পরিবারের প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিকে হারিয়েছে। এসব পরিবার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য ধরনা দিচ্ছে, আর অনেক পরিবার তাদের প্রিয়জনের মৃত্যুর পরিস্থিতি নিয়েও বিভ্রান্তিতে আছে।
প্রবাসী শ্রমিকদের যুদ্ধের অনেক কাহিনিই আমাদের জানা। অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাতে গিয়ে অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা অতীতে ঘটেছে। নৌকাডুবি হয়ে বহু মানুষের প্রাণ গেছে। মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের জলসীমায় এ রকম অনেক নৌকায় গুলি চালানো হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়ে সেসব দেশের জেলখানায় স্থান হয়েছে বহুজনের। অনেকে গহিন জঙ্গলে আফিম চাষের জন্য ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে বলেও জানা যায়। অনেককে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনাও ঘটছে। কিন্তু বিদেশে গিয়ে এভাবে প্রাণহানি কেন? কেন কারণ জানা যাবে না। আমাদের দূতাবাস সেখানে কী করছে?
একদিকে ভোগবিলাস ও প্রাচুর্যের হাতছানি, অন্যদিকে জীবনের রূঢ় কঠিন বাস্তবতা। এরই মধ্যে কিছু মানুষ জীবন বাজি রেখে বেঁচে থাকার উপায় খোঁজে। সামান্য উন্নত জীবনের আশায় নিজের পাশাপাশি পরিবারকেও ঠেলে দেয় প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে। সেটি যেমন দেখা গেছে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া যাওয়ার ক্ষেত্রে, তেমনি দেখা যাচ্ছে লিবিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার ক্ষেত্রেও। আর তার মূল্যও দিতে হয়েছে বহু মানুষকে।
উন্নত জীবনের আশায় বিদেশে জীবনহানি প্রত্যাশিত নয়। এসব ঘটনার নেপথ্য কারণ অনুসন্ধান করতে হবে।