আমাদের বাজার কোনো যুক্তি মানে না, কোনো নিয়ম-কানুন মানে না। এখানে নৈতিকতা বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। যে যেভাবে পারে ক্রেতা-ভোক্তাদের পকেট কাটে। মাসখানেক আগে ডিমের দাম হঠাৎ করে ১৬০ টাকা ডজন হয়ে যায়।
বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে ব্যবসায়ীদের অজুহাতের অভাব হয় না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, তেলের দাম বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া—আরো কত কী! কিন্তু কোন কারণে কোন জিনিসের দাম কতটা বাড়তে পারে তার যৌক্তিক তথ্যটি কেউ দেয় না। এর আগে ডিমের দাম বৃদ্ধির জন্য অজুহাত দেখানো হয়েছিল পরিবহন খরচ বৃদ্ধি। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ যেটুকু বেড়েছে, তাতে এক ডজন ডিম পরিবহনে খরচ বাড়ে ৫০ পয়সারও কম। কিন্তু বাজারে বেড়ে গিয়েছিল ৩০ টাকার বেশি।
আবার ভারতে বা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে দাম বেড়ে যায়। কিন্তু দাম কমার খবর এলেও দাম কমে না। তখন বলা হয়, কম দামে কেনা পণ্য বাজারে আসতে দুই মাস সময় লাগে। একইভাবে দেখা যায়, দেশে কোনো পণ্যের, যেমন—সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হলে তাত্ক্ষণিকভাবে বাজারে দাম বেড়ে যায়। কিন্তু কমানো হলে কমে না। বলা হয়, দোকানের এই তেল বেশি দামে কেনা। সর্বশেষ ডিম, মুরগি, সবজিসহ আরো কিছু পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার অজুহাত হিসেবে ব্যবসায়ীরা কয়েক দিনের বৃষ্টিকে দায়ী করছেন। তাতে নাকি সরবরাহ কমে গেছে। সুযোগ পেলেই দাম বাড়িয়ে দেওয়ার এই যে অনৈতিক প্রবণতা, তা রোধ করার উপায় কী?
সাধারণ মানুষ বা ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। তাই সরকারকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হতে হবে। অনৈতিক মুনাফাকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। যেকোনো মূল্যে বাজারকে সাধারণের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে হবে। বাজার সাধারণ মানুষের আয়ত্তে না থাকলে অসন্তোষ দেখা দেবে। আর সে কারণেই বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই।