পরিবহন খাতে চাঁদা এখন যেন অনেকটাই বৈধতা পেয়ে গেছে। সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদাবাজির খবর নিয়মিত গণমাধ্যমে এলেও কোনো প্রতিকার হয়নি। বরং সময়ে সময়ে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির কৌশল বদল হয়েছে। যেমন—করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের কঠোর বিধি-নিষেধের কারণে দেশে দূরপাল্লার বাস বন্ধ ছিল, তখন চাঁদাবাজি হয় নতুন কৌশলে। আবার সাম্প্রতিক সময়ে এসেও বদল হয়েছে কৌশল। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, উত্তরাঞ্চলের মহাসড়কে নিষিদ্ধ তিন চাকার গাড়ি দেখলেই পুলিশ মামলা করে। তবে এই মামলা অনেকটা লোক-দেখানো।
তলে তলে পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করেই তিন চাকার গাড়িগুলো মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়ায়। সেই চাঁদার পরিমাণও বেরিয়ে এসেছে অনুসন্ধানে। প্রকাশিত খবরেই বলা হয়েছে, সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক ও মালিকরা মালিক সমিতির মাধ্যমে মাসিক আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করার নামে উত্তোলন করেন। আর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালকরা তাঁদের সমিতি ও ছোট ছোট গ্রুপ আকারে প্রতি মাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকা করে উত্তোলন করে হাইওয়ে পুলিশকে দিয়ে থাকেন। এই টাকার একাংশ ট্রাফিক পুলিশ ও ফাঁড়ি পুলিশ পেয়ে থাকে। মাসিক টাকা প্রদানকারী চালকদের নির্দিষ্ট একজন হাইওয়ে পুলিশের আদায়কারীর মুঠোফোন নম্বর দেওয়া হয়। তাঁরা কোনো জায়গায় আটক হলে ওই নম্বরে কল দেন। এরপর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আর টাকা না দেওয়া থাকলে মামলা করে পুলিশ।
গণমাধ্যমে এর আগে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে স্বল্প পরিসরে চলাচলকারী পরিবহনগুলোতেও চাঁদাবাজি হয়। মহাসড়কের ছোট-বড় ট্রাক, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, ব্যাটারিচালিত রিকশা থেকেও পুলিশ ও পরিবহনের চিহ্নিত দুর্বৃত্তদের চাঁদাবাজি চলে। প্রকাশ্যেই পরিবহন শ্রমিক ও চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, চট্টগ্রাম-রাঙামাটি, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম-বান্দরবান মহাসড়কের নানা পয়েন্টে হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। বগুড়া, উত্তরবঙ্গের সড়ক-মহাসড়কসহ ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-খুলনা ভায়া পাটুরিয়া সড়কে সক্রিয় চাঁদাবাজদের একাধিক সিন্ডিকেট। এদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন যানবাহনের চালকরা। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ সদস্য ও পরিবহন শ্রমিকরা মিলে গড়ে তুলেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। পরস্পরের যোগসাজশে কৌশলে সড়ক-মহাসড়কে চলছে টাকার খেলা।
চাঁদাবাজি বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা নেবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/pym5
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন