তৃতীয় দফা বন্যার কবলে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার মানুষ। উজানে থাকা ভারতের বিভিন্ন পাহাড়ি নদীর ঢল দুই দিন ধরে প্রবলভাবে প্রবেশ করছে। এর ফলে হঠাৎ করেই ডুবে গেছে নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার বিস্তীর্ণ নিচু এলাকা। নদীভাঙন তীব্র হয়েছে।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় মাহবুবুর রহমান (৫৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, সাঁতরে নদী পার হওয়ার সময় স্রোতের টানে ভেসে যাওয়া কৃষকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ডুবে গেছে সদ্য রোপণ করা আমন ধানের জমি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবজির আবাদ। ফলে এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষ পুরোপুরি দিশাহারা হয়ে পড়েছে।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, তিস্তার পানি বৃদ্ধির কারণে নীলফামারী ও লালমনিরহাটের অনেক নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কিছু জায়গায় বাড়িঘরে পানি উঠেছে, ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে নীলফামারীর ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপত্সীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তিস্তার পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ী, খগাখড়িবাড়ী, খালিশাচাপানী, ঝুনাগাছচাপানী ও গয়াবাড়ী ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
আকস্মিক পানি বৃদ্ধিতে টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ী গ্রামে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার এলাকা ভেঙে গেছে। বাঁধের ভাঙা স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। লালমনিরহাটের তিস্তাতীরবর্তী নিচু এলাকাগুলোতেও আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের পাঁচটি উপজেলায় অন্তত ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শুধু তিস্তা নয়, এলাকার সব নদীতেই দ্রুত পানি বাড়ছে।
এ বছর আগেও দুই দফা বন্যায় ভেসেছে এই অঞ্চলের মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বোরো ও আউশ ধানের উৎপাদন। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। সবজি উৎপাদনে ধস নেমেছে। নদীভাঙনে অনেকে জমি ও ঘরবাড়ি হারিয়েছে। অনেকের ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষ চোখে অন্ধকার দেখছিল। এ অবস্থায় আবারও বন্যার প্রাদুর্ভাবে তাদের বেঁচে থাকার আশাই ক্ষীণ হয়ে আসছে। অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। পাশাপাশি উজানের ঢল থেকে তাদের রক্ষায় স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।