English

26 C
Dhaka
শুক্রবার, মে ৩০, ২০২৫
- Advertisement -

ঘুরে দাঁড়াতে পদক্ষেপ নিন: গভীর সংকটে দেশের অর্থনীতি

- Advertisements -
বহুমুখী সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। সংকটের এই জটিলতা একদিকে দেশের শিল্প খাতকে মৃত্যুমুখী করে তুলছে, অন্যদিকে বেকারত্ব চরম আকার নিচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠের তিনটি প্রতিবেদনে দেশের অর্থনৈতিক অচলাবস্থার এক ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা।
অস্তিত্বসংকটে শিল্প-কারখানা। উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, ডলারের উচ্চমূল্য, জ্বালানি খাতে অস্থিরতা এবং ঋণের উচ্চ সুদহার—সব একসঙ্গে মিলে শিল্পোদ্যোক্তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির উদ্যোগের প্রতিক্রিয়ায় বড় ধাক্কা লেগেছে দেশের রাজস্ব খাতে।
টেক্সটাইল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতির মতে, শিল্পোদ্যোক্তারা আশঙ্কা করছেন, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে অচিরেই দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।
গ্যাসসংকটে ৬০ শতাংশ উৎপাদন কমে যাওয়া এবং বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে শিল্প মালিকরা দিশাহারা। গ্যাস কম্পানিগুলো গ্যাস সরবরাহ না করেই বিল নিচ্ছে। সরকার গ্যাস-বিদ্যুৎ ঠিকমতো দিতে না পারলেও নানা মহল ও কর্তৃপক্ষ হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ব্যাংকঋণের সুদের হার বৃদ্ধি, যা ১৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

এতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি তলানিতে নেমে এসেছে, যা ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। সার্বিক পরিস্থিতিতে নতুন বিনিয়োগ তো দূরের কথা, চলমান ব্যবসা-বাণিজ্যই টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

অর্থনৈতিক সংকটের সরাসরি প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থানে। এক বছরে বেকার বেড়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আগামী ঈদে কারখানাগুলো বেতন-ভাতা দিতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।ফলে শ্রমিক আন্দোলন এক নতুন সংকট তৈরি করতে পারে। রাজস্ব আদায়ে ধস নেমেছে। এনবিআর বিলুপ্তির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি এই ঘাটতি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, চলতি পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষে রাজস্ব ঘাটতির অঙ্ক এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেছে। সরকারের ঋণনির্ভরতা বেড়েছে ৬০ শতাংশ, যা বেসরকারি খাতের জন্য ব্যাংকঋণ আরো সীমিত করে দিচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো খেলাপি ঋণের লাগামহীন বৃদ্ধি।

বর্তমানে তিন লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে, এবং আরো ৪৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ নতুন করে খেলাপি হওয়ার পথে। আইএমএফের শর্ত মেনে কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা তিন মাস করায় এই অঙ্ক আরো বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এই বহুমুখী সংকট থেকে মুক্তি পেতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে অবিলম্বে কঠোর ও সুদূরপ্রসারী নীতি গ্রহণ করতে হবে। শিল্প খাতকে বাঁচাতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা, ব্যাংকঋণের সুদের হার সহনীয় পর্যায়ে আনা এবং খেলাপি ঋণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়লে ব্যবসা-বাণিজ্য তথা সামগ্রিক অর্থনীতিতে সংকট আরো গভীর হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় নিতে না পারলে দেশের অর্থনীতি আরো গভীর সংকটে নিমজ্জিত হবে।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন