এতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি তলানিতে নেমে এসেছে, যা ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। সার্বিক পরিস্থিতিতে নতুন বিনিয়োগ তো দূরের কথা, চলমান ব্যবসা-বাণিজ্যই টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
অর্থনৈতিক সংকটের সরাসরি প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থানে। এক বছরে বেকার বেড়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আগামী ঈদে কারখানাগুলো বেতন-ভাতা দিতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।ফলে শ্রমিক আন্দোলন এক নতুন সংকট তৈরি করতে পারে। রাজস্ব আদায়ে ধস নেমেছে। এনবিআর বিলুপ্তির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি এই ঘাটতি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, চলতি পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষে রাজস্ব ঘাটতির অঙ্ক এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেছে। সরকারের ঋণনির্ভরতা বেড়েছে ৬০ শতাংশ, যা বেসরকারি খাতের জন্য ব্যাংকঋণ আরো সীমিত করে দিচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো খেলাপি ঋণের লাগামহীন বৃদ্ধি।
বর্তমানে তিন লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে, এবং আরো ৪৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ নতুন করে খেলাপি হওয়ার পথে। আইএমএফের শর্ত মেনে কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা তিন মাস করায় এই অঙ্ক আরো বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এই বহুমুখী সংকট থেকে মুক্তি পেতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে অবিলম্বে কঠোর ও সুদূরপ্রসারী নীতি গ্রহণ করতে হবে। শিল্প খাতকে বাঁচাতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা, ব্যাংকঋণের সুদের হার সহনীয় পর্যায়ে আনা এবং খেলাপি ঋণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়লে ব্যবসা-বাণিজ্য তথা সামগ্রিক অর্থনীতিতে সংকট আরো গভীর হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় নিতে না পারলে দেশের অর্থনীতি আরো গভীর সংকটে নিমজ্জিত হবে।