শীত এখনো জাঁকিয়ে বসেনি। অথচ এরই মধ্যে শীতজনিত রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব চরমে উঠেছে। সাধারণ সর্দি-কাশি তো আছেই, সেই সঙ্গে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, টনসিল ফুলে যাওয়া, কোল্ড ডায়রিয়াসহ শীতকালীন নানা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা।
হাসপাতালগুলোতে ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি রোগী এসে ভিড় করছে। মেঝেতেও স্থান সংকুলান হচ্ছে না। এর মধ্যে আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, এ মাসেই একাধিক শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে হাসপাতালগুলোর কী অবস্থা হবে, আর রোগীরা কোথায় যাবে?
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতে বাতাসে ধুলাবালির পরিমাণ বেড়ে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে বায়ুদূষণও অনেক বেড়েছে। ফলে শ্বাসতন্ত্রের রোগ এমনিতেই তীব্র হচ্ছে। তার ওপর শীতের তীব্রতা বাড়ায় অসুস্থতার পরিমাণ বেড়ে গেছে। শিশু ও বৃদ্ধদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কিছুটা কম হওয়ায় তারাই বেশি আক্রান্ত হয়। তার ওপর যাদের দীর্ঘমেয়াদি রোগ, যেমন—হাঁপানি, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি, লিভার বা ফুসফুসের সমস্যা আছে তারা দ্রুত কাবু হয়ে পড়ে। তাদের দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কিন্তু হাসপাতালগুলোর যেমন ‘ঠাঁই নাই’ অবস্থা, তাতে তাদের নেওয়া হবে কোথায়?
গত কয়েক দিনে বেশ কিছু খবর প্রকাশিত হয়েছে, যেগুলো শীতজনিত রোগ ব্যবস্থাপনায় আমাদের দুর্বলতাকেই তুলে ধরে। শনিবার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, এসব হাসপাতালে ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। মেঝেতেও রোগীদের স্থান সংকুলান করা যাচ্ছে না। একই অবস্থা ঢাকার বাইরেও। বাগেরহাট থেকে পাঠানো খবরে দেখা যায়, জেলা হাসপাতাল এবং প্রায় সব উপজেলা হাসপাতালেই রোগীর সংখ্যা ধারণক্ষমতার অনেক বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যাই বেশি। তাদের বেশির ভাগই জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। মাদারীপুর সদর হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ধারণক্ষমতার তিন গুণ। গত সোমবার প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের অবস্থা আরো খারাপ। সেখানে ১১০ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি ছিল ৬১৩ জন। শ্বাসকষ্ট ও ঠাণ্ডাজনিত রোগে আগের তিন দিনে সেখানে ৩৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এমন অবস্থা এখন দেশের অনেক হাসপাতালেরই।
শীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। অনেকেরই থাকার ভালো ঘর নেই। ভাঙা বেড়ার ঘরে শীতের কনকনে বাতাস ঢুকে পড়ে। গরম জামা-কাপড়েরও অভাব রয়েছে। সেই সঙ্গে আছে পুষ্টির অভাব ও রক্তাল্পতা। তাদের রক্ষায় গরম কাপড় বিতরণের মতো তাত্ক্ষণিক কিছু উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। হাসপাতালগুলোতে শীতকালীন রোগ ব্যবস্থাপনা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে অনেক বেশি তৎপর হতে হবে। পাশাপাশি পরিবেশদূষণ কমানোর উদ্যোগও নিতে হবে। একই সঙ্গে নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে। শিশু ও বৃদ্ধদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।