দেশীয় সংস্কৃতির এক অনবদ্য উপাদান যাত্রাপালা। সুদূর অতীতকাল থেকে দেশের আনাচকানাচে এই বিনোদন মাধ্যমটির প্রচলন রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে নানা কারণে যাত্রাশিল্প ধুঁকছে। সংস্কৃতিমনা মানুষ নানাভাবে চেষ্টা করছে যাত্রাশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে, এর হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে।
এ কাজে সরকারও নানাভাবে সহায়তা করছে। কিন্তু পুলিশ কেন তার বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে? প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ধারাবর্ষার চরে শনিবার রাতে যাত্রাপালা শুরুর আগেই যাত্রার একটি প্যান্ডেল পুড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। ‘অনুমতিপত্র দেখাতে না পারায়’ প্যান্ডেল পুড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা কি রাষ্ট্র পুলিশকে দিয়েছে?
শুধু বগুড়া নয়, সারা দেশেই মৌলবাদী চরিত্রের কিছু মানুষ ‘অশ্লীলতা’, ‘জুয়া খেলা’ ইত্যাদি অভিযোগ তুলে যাত্রাপালার মঞ্চায়নকে বাধাগ্রস্ত করে আসছে। অনেক সময় শিল্পীদের মারধর করছে। বগুড়ায় ‘দি নিউ হিরামণি অপেরা’ নামে যে দলটি যাত্রাপালা মঞ্চায়ন করতে যাচ্ছিল, সেটি একটি নিবন্ধিত দল।
সরকারকে প্রয়োজনীয় ফি দিয়েই তারা নিবন্ধন নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানান, তিনি যাত্রাপালা মঞ্চায়নের ব্যাপারে অবহিত ছিলেন এবং সেখানে যেন জুয়ার আসর বা অশ্লীল নাচের আয়োজন করা না হয়, সে জন্য আয়োজকদের সাবধান করে দিয়েছিলেন। তার অর্থ স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদের মৌখিক অনুমতি অন্তত ছিল।
যাত্রাপালা যেহেতু শুরুই হয়নি, তাই অশ্লীল নাচ প্রদর্শনের প্রশ্নই ওঠে না। জুয়ার আসর পরিচালনারও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। আর বিনা অনুমতিতে যাত্রার আয়োজন করা হয়ে থাকলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। স্থানীয় ইউএনও যথার্থই বলেছেন, ‘প্রয়োজনে সরঞ্জাম জব্দ করে নিলাম করা যেত, কোনো কিছু পুড়িয়ে ধ্বংস করা উচিত নয়। ’
যাত্রাশিল্পের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হয়, তা বেশির ভাগই ভিত্তিহীন। কোথাও কোথাও স্থানীয় আয়োজকদের বাড়াবাড়ি থাকে। তেমন অভিযোগ থাকলে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। যাত্রাশিল্পকে ধ্বংস করা, শিল্পীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা কিংবা প্যান্ডেল পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বরং স্থানীয় প্রশাসনের উচিত, যাত্রাশিল্পকে প্রতিরক্ষা দেওয়া ও সহযোগিতা করা।
বগুড়ার সারিয়াকান্দির ঘটনাটি ভালোভাবে তদন্ত করতে হবে। এটি কি পুলিশ কর্মকর্তাকে ‘বখরা’ না দেওয়ার কারণে ঘটানো হয়েছে, নাকি এর পেছনে কোনো মৌলবাদী গোষ্ঠীর ইন্ধন রয়েছে তা খোঁজ করে দেখতে হবে।
আমরা চাই, এ ধরনের ঘটনার যেন কোথাও পুনরাবৃত্তি না হয়, তা নিশ্চিত করা হোক। পাশাপাশি তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।