মানুষ বাড়ছে। বাড়ছে খাদ্যের চাহিদা। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়াতেই হবে। এ জন্য নিরন্তর গবেষণার কোনো বিকল্প নেই।
২০১৭ সালে দিনাজপুরে স্থাপিত বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটে এরই মধ্যে ২৭টি গমের জাত এবং ২৯টি ভুট্টার জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতায় প্রতিষ্ঠানটি বীজ উৎপাদন কার্যক্রম খুব একটা এগোতে পারছে না। বীজ উৎপাদনের জন্য প্রতিষ্ঠানটির জমি প্রয়োজন প্রায় সাড়ে ৩০০ একর, কিন্তু আছে মাত্র ১৯.৫ একর। এই জমি দিয়ে যেমন গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না, তেমনি মানসম্মত বীজ উৎপাদনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ উৎপাদন প্রথাগত চাষাবাদে ব্যবহৃত বীজের মতো নয়। এই বীজ বিশেষ পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনায় তৈরি করতে হয়। বর্তমানে দেশে গমের চাহিদা ৭৫ লাখ টন, কিন্তু উৎপাদিত হচ্ছে মাত্র ১২ লাখ টন। বাকি ৭৮ লাখ টনই আমদানি করতে হয়। একইভাবে ভুট্টার চাহিদা ৭০ লাখ টন আর উৎপাদিত হচ্ছে ৫৫ লাখ টন। কাজেই আমদানি নির্ভরতা কমাতে এ দুটি খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে।
সে জন্য গম ও ভুট্টার মানসম্মত বীজ উৎপাদনও অনেক বাড়াতে হবে। এখনো প্রতিবছর এসব বীজের একটি বড় অংশ আমদানি করতে হয়। অনেক সময় আমদানি করা বীজের মান যথেষ্ট ভালো থাকে না। তখন কৃষকদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। এ কারণে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আর সময় নষ্ট না করে এখনই বাংলাদেশের উচিত বীজ উৎপাদনে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে বারবার মন্ত্রণালয়ের কাছে জমি চেয়ে আবেদন করা হলেও কোনো লাভ হয়নি। ফলে বিজ্ঞানীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা কাজ করছে। জানা যায়, আশপাশেই সরকারের ও বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন অনেক জমি পতিত রয়েছে। দিনাজপুর, রাজশাহী ও জামালপুর অঞ্চলে তিনটি চিনিকলের অধীন পতিত জমির পরিমাণই প্রায় হাজার একর।
আমরা আশা করি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জরুরি বিবেচনায় গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটকে প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দ দেওয়া হবে।