ক্রমবর্ধমান হারে বায়ুদূষণ হতে থাকলেও তা রোধের কিংবা দূষণের গতি কমিয়ে আনার বাস্তব প্রচেষ্টা খুব একটা দৃশ্যমান নয়।
সারা পৃথিবীর রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান প্রায়ই শীর্ষস্থানে চলে যায়। বাংলাদেশের অন্য বড় শহরগুলোর অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। বিভিন্ন সময় গবেষণায় উঠে এসেছে, গাজীপুর শহরের দূষণের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। ভালো নয় গ্রামাঞ্চলের অবস্থাও।
দূষণের জন্য প্রধানত দায়ী করা হয় প্রচলিত ইটভাটাগুলোকে। গ্রামাঞ্চলে এখন ইটভাটার ছড়াছড়ি। দূষণের অন্য প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে পুরনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের কালো ধোঁয়া, খানাখন্দে ভরা রাস্তাঘাট, যেগুলো থেকে শুষ্ক মৌসুমে রীতিমতো ধুলাবালির ঝড় ওঠে, খোলা অবস্থায় মাটি, বালু পরিবহন, প্রয়োজনীয় প্রতিরোধব্যবস্থা ছাড়া নির্মাণকাজ, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা ছাড়াই কলকারখানা পরিচালনা, গাড়ির টায়ারসহ নানা রকম প্লাস্টিক পোড়ানো, খোলা জায়গায় আবর্জনা পোড়ানোসহ এমন অনেক কর্মকাণ্ড।
এসব দূষণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর উদাসীনতা ও অবহেলা সীমাহীন। তার প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ুতে। শিকাগো ইউনিভার্সিটির এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স-২০২১’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস। আর ঢাকায় মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস।
বায়ুদূষণ রোধে আমাদের অনেক আইন রয়েছে, কিন্তু সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরসহ অনেক সংস্থার নির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। প্রায় কোনো সংস্থাই তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে না। দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেক সংস্থা নিজেরাই অতিমাত্রায় দূষণকারী কর্মকাণ্ড করছে, এমন অভিযোগও কম নয়।
উচ্চ আদালতও বিভিন্ন সময় বায়ুদূষণ রোধে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন, সেগুলোও বাস্তবায়ন করা হয় না। তাহলে আমাদের বায়ুদূষণের মাত্রা কমবে কিভাবে? আমরা চাই, বায়ুদূষণের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ডগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হোক। নির্মল বায়ুর জোগান বাড়ানোর লক্ষ্যে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হোক।
The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/fyv4