English

28 C
Dhaka
শনিবার, মে ১৮, ২০২৪
- Advertisement -

দূষণ নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিন: বায়ুদূষণে কমছে আয়ু

- Advertisements -
বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন অক্সিজেনসমৃদ্ধ নির্মল বায়ু, যা আমরা নিঃশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করে থাকি, কিন্তু সেই নির্মল বায়ুর অভাব ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ যেমন কমছে, তেমনি নানা ধরনের অতি ক্ষুদ্র কণাসহ ক্ষতিকর নানা গ্যাসীয় পদার্থের পরিমাণ বাড়ছে।নিঃশ্বাসের সঙ্গে এসব ক্ষতিকর পদার্থ টেনে নেওয়ায় আমাদের ফুসফুস আক্রান্ত হচ্ছে। ফুসফুসের কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ক্যান্সার, হৃদরোগসহ আরো অনেক শারীরিক সমস্যা। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর যত মানুষ রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যায়, তার প্রায় এক-চতুর্থাংশেরও বেশি মারা যায় বায়ুদূষণজনিত কারণে। এমন অবস্থায়ও বায়ুদূষণ রোধে আমাদের ব্যর্থতা আকাশছোঁয়া।
ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে বায়ুদূষণের মাত্রা। রাজধানীর বেসরকারি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণায় উঠে এসেছে, গত অক্টোবর মাসের বায়ুদূষণের পরিমাণ ছিল আগের সাত বছরের গড় মাসিক দূষণের তুলনায় ১৬.৪৪ শতাংশ বেশি।
ক্যাপসের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) আগের সাত বছরের প্রথম ১০ মাসের তুলনায় গড়ে প্রায় ১৭.৯৩ শতাংশ বেশি বায়ুদূষণ হয়েছে। আর ২০২২ সালের তুলনায় এটি ছিল ৭.৫ শতাংশ বেশি।
ক্রমবর্ধমান হারে বায়ুদূষণ হতে থাকলেও তা রোধের কিংবা দূষণের গতি কমিয়ে আনার বাস্তব প্রচেষ্টা খুব একটা দৃশ্যমান নয়।
সারা পৃথিবীর রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান প্রায়ই শীর্ষস্থানে চলে যায়। বাংলাদেশের অন্য বড় শহরগুলোর অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। বিভিন্ন সময় গবেষণায় উঠে এসেছে, গাজীপুর শহরের দূষণের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। ভালো নয় গ্রামাঞ্চলের অবস্থাও।
দূষণের জন্য প্রধানত দায়ী করা হয় প্রচলিত ইটভাটাগুলোকে। গ্রামাঞ্চলে এখন ইটভাটার ছড়াছড়ি। দূষণের অন্য প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে পুরনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের কালো ধোঁয়া, খানাখন্দে ভরা রাস্তাঘাট, যেগুলো থেকে শুষ্ক মৌসুমে রীতিমতো ধুলাবালির ঝড় ওঠে, খোলা অবস্থায় মাটি, বালু পরিবহন, প্রয়োজনীয় প্রতিরোধব্যবস্থা ছাড়া নির্মাণকাজ, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা ছাড়াই কলকারখানা পরিচালনা, গাড়ির টায়ারসহ নানা রকম প্লাস্টিক পোড়ানো, খোলা জায়গায় আবর্জনা পোড়ানোসহ এমন অনেক কর্মকাণ্ড।
এসব দূষণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর উদাসীনতা ও অবহেলা সীমাহীন। তার প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ুতে। শিকাগো ইউনিভার্সিটির এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স-২০২১’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস। আর ঢাকায় মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস।
বায়ুদূষণ রোধে আমাদের অনেক আইন রয়েছে, কিন্তু সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরসহ অনেক সংস্থার নির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। প্রায় কোনো সংস্থাই তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে না। দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেক সংস্থা নিজেরাই অতিমাত্রায় দূষণকারী কর্মকাণ্ড করছে, এমন অভিযোগও কম নয়।
উচ্চ আদালতও বিভিন্ন সময় বায়ুদূষণ রোধে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন, সেগুলোও বাস্তবায়ন করা হয় না। তাহলে আমাদের বায়ুদূষণের মাত্রা কমবে কিভাবে? আমরা চাই, বায়ুদূষণের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ডগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হোক। নির্মল বায়ুর জোগান বাড়ানোর লক্ষ্যে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হোক।
সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন