English

34 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৪
- Advertisement -

দ্রুত তদন্ত, বিচার ও শাস্তি হোক: ইউএনওর ওপর হামলা

- Advertisements -
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউওনও) ওয়াহিদা খানম ও তাঁর বাবা ওমর আলীর ওপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় সবাই বিস্মিত, ক্ষুব্ধ ও হতবাক। করোনা মহামারি চলছে, মানুষ ব্যস্ত বাঁচামরার সংগ্রামে। এর মধ্যে রোমহর্ষক রক্তাক্ত ঘটনাটি দেশের অন্যতম আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় র‌্যাব–১৩–এর সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার তিন ব্যক্তি প্রাথমিক স্বীকারোক্তিতে বলেছেন, তাঁরা ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বাসায় ঢুকেছিলেন চুরির উদ্দেশ্যে। তবে এর আগে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, স্থানীয় সাংসদ শিবলী সাদিক, দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলমসহ দায়িত্বশীল আরও কেউ কেউ বলেন, হামলার উদ্দেশ্য ছিল ইউএনওকে হত্যা করা। প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে অবশ্যই আরও তদন্ত প্রয়োজন; তার আগে আংশিকভাবে পাওয়া বক্তব্য থেকে উপসংহারে পৌঁছা সমীচীন হবে না।
মাঠপর্যায়ের সরকারি প্রশাসনের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার বাড়িতে ঢুকে তাঁর ওপর এমন বর্বর হামলা চালানোর ঘটনা অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়। এ থেকে এ দেশে অপরাধবৃত্তির দৌরাত্ম্য অনুমান করা যায়। একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও যদি নিজের বাসভবনে এমন নিরাপত্তাহীন হয়ে থাকেন, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি কত নাজুক, তা সহজেই আঁচ করা যায়। খুন–ধর্ষণের মতো গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ করেও বিচার ও শাস্তি থেকে পার পাওয়া সম্ভব—এমন ধারণা কতটা গভীরে শিকড় ছড়ালে একজন ইউএনও এমন মারাত্মক হামলার শিকার হতে পারেন, তা ভেবে সত্যিই উদ্বিগ্ন হতে হয়।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ওয়াহিদা খানম ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন, নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান চালিয়েছেন। সীমান্তবর্তী এলাকাটিতে মাদক ও চোরাচালান বন্ধের চেষ্টা শুরু করেন। করোনাকালে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে তাঁর ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে। পদাধিকারবলে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতিও তিনি।
অপরাধবৃত্তির সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক থাকে। এমন অভিযোগ অনেক যে অপরাধীরা রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে বিচার ও শাস্তি এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়। ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলাকারীদের তেমন কোনো রাজনৈতিক যোগাযোগ আছে কি না, তা–ও ভালোভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। হামলার পর স্থানীয় যুবলীগের তিন নেতাকে আটক করা হয়েছিল, পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে সন্ধ্যায় র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কী তথ্যের ভিত্তিতে তাঁদের আটক করা হয়েছিল এবং অল্প সময়ের মধ্যেই কেন তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে—জনমনে এমন জিজ্ঞাসা জাগা অস্বাভাবিক নয়।
বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ক্রমেই নাজুকতর হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, আইনের দ্রুত ও যথাযথ প্রয়োগ এবং অপরাধীদের বিচার করে শাস্তি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে একটি সমাজে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক নিরাপত্তার বোধ সৃষ্টি হয় এবং অটুট থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছি। মানুষের নিরাপত্তা দিন দিন কমছে। সমান্তরালভাবে কমছে আইন, বিচার ও অপরাধ দমনব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা। ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর এ বর্বর হামলার তাৎপর্য এই যে এ দেশে আজ কেউ নিরাপদ নয়।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ জরুরি। সে জন্য জরুরি প্রয়োজন হামলার ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত এবং অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা।
সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন