সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। বাংলাদেশে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এটাই প্রথম। এ ছাড়া কোনো অগ্নিকাণ্ডে ফায়ার সার্ভিসের এত কর্মীর নিহত হওয়ার ঘটনাও এর আগে ঘটেনি। কেন এমন ঘটল? আগুন নেভাতে গিয়ে আগুনে পুড়ে ও বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিসের এত কর্মীকে কেন জীবন দিতে হলো?
ফায়ার ফাইটার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ছিলেন মা-বাবার একমাত্র ছেলে।
মাত্র সাত দিন আগে কন্যাসন্তানের বাবা হয়েছিলেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্য মো. মনিরুজ্জামান। ছুটি নিয়ে শিগগিরই মেয়েকে দেখতে আসার কথা ছিল। কিন্তু মেয়ের মুখ না দেখেই তাঁকে বিদায় নিতে হয়েছে।
ফায়ার ফাইটারের উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে রাঙামাটির মিঠু দেওয়ান শনাক্ত হয়েছেন। তবে নিপন চাকমা নিখোঁজ রয়েছেন। কনটেইনার ডিপোর আগুন নেভাতে গিয়ে জীবন হারিয়েছেন মানিকগঞ্জের রানা মিয়া। নিহত হয়েছেন ফায়ার ফাইটার মো. আলাউদ্দিন। তাঁর তিন বছরের একটি ছেলে আছে। নিহত হয়েছেন রমজানুল ইসলাম রনি ও সীতাকুণ্ডের ফায়ার স্টেশনের কর্মী ইমরান মজুমদার। ইমরানের দুই সন্তান রয়েছে। স্ত্রী আবার পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
কতগুলো নিবেদিতপ্রাণ মানুষের জীবনপ্রদীপ নিভে গেল। নিহত ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের অনেকেই ছিলেন তাঁদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এই পরিবারগুলো এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? বিএম ডিপোর আগুন একসময় নিভে যাবে। হয়তো আবার কর্মচঞ্চল হবে এই কনটেইনার ডিপো। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের এই সদস্যদের পরিবারগুলো কি আগের মতো প্রাণ ফিরে পাবে?
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহম্মেদ খান (অব.) এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের জানা ছিল না যে এখানে কী ধরনের দাহ্য পদার্থ আছে। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডে পানি বা নাড়া পড়লে বোমার মতো অগ্নিবিস্ফোরণ ঘটে। অন্য সাধারণ ঘটনার মতোই ফায়ার ফাইটাররা ক্লোজ ফাইটিং (কাছাকাছি গিয়ে আগুন নেভানো) করেছেন। ’ তাঁর মতে, ‘সবার জানা-বোঝার ঘাটতির কারণে বড় খেসারত বা চরম মূল্য দিতে হয়েছে। ’
ভুলটা কার? কে দেবে ভুলের খেসারত? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘এ ধরনের বিস্ফোরকভর্তি কনটেইনার কেন্দ্রীয় ডিপোতে না রেখে সম্পূর্ণ আলাদা ব্যবস্থায় রাখা দরকার ছিল। ’ বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘এসব বিস্ফোরক রাসায়নিক যাঁরা পরিবহন ও মজুদ করেছেন, তাঁদের ব্যবস্থাপনাটা সম্পূর্ণভাবেই ত্রুটিপূর্ণ ছিল। ’ যেকোনো ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য ডিপোটিতে ইমার্জেন্সি রেসপন্স ব্যবস্থা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখার বিষয়েও গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ধরনের কোনো ঘটনা ভবিষ্যতে আর ঘটবে না—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।