দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে (ইজেড) ইজারা নেওয়া জমির দামের ওপর সরকার যে ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ধার্য করেছে, তার যৌক্তিকতা ও আইনি ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বিনিয়োগকারীদের জন্য জমির যে ইজারামূল্য নির্ধারণ করেছিল, তাতে ভ্যাটের উল্লেখ ছিল না। ২০১৯ সালের ১ জুলাই জারি হওয়া ভ্যাট আইনে জমির ইজারামূল্যের ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়। সরকারি ও বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল মিলিয়ে ১৯২টি প্রতিষ্ঠানকে জমি দেওয়া হয়েছে।
অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীরা সরকারের এই পদক্ষেপে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তাঁদের মতে, চুক্তির সময় ভ্যাটের বিধান না থাকলে সরকার নতুন করে ভ্যাট আরোপ করতে পারে না। করলে সেটি চুক্তির বরখেলাপ। বেজার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩টি সরকারি ও ১০টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে মোট ১ হাজার ৭৮৫ কোটি মার্কিন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি। জমির ইজারা দামের ওপর ভ্যাট আরোপ নয়, এই বিনিয়োগ যাতে আরও বাড়ে, সেদিকেই সরকারের নজর দেওয়া উচিত।
বিনিয়োগকারীদের দাবি, গত পাঁচ বছরে জমি বরাদ্দ দিয়ে বেজা ইজারামূল্য বাবদ যে অর্থ পেয়েছে, তার ওপর ভ্যাট হিসাব করলে ৩০৫ কোটি টাকা দাঁড়ায়। ভ্যাট বাতিল করলেও বার্ষিক হিসাবে সরকারকে খুব বেশি রাজস্ব হারাতে হবে না। অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ বাড়লে সরকার অনেক বেশি রাজস্ব পাবে।
গত বৃহস্পতিবার বেজার পরিচালনা পর্ষদের সভায় একজন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, যিনি সরকারি দলের একজন সাংসদও, ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেছেন, করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় জমির ইজারা দামের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হলে ব্যবসায়ীদের খরচ আরও বেড়ে যাবে। এর আগে বিনিয়োগকারীরা ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভ্যাট প্রত্যাহার কিংবা যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। এই কমিটিতে বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। আমরা কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। তবে কমিটি গঠনের মাধ্যমে যেন বিষয়টি হিমাগারে চলে না যায়।
এখানে বিনিয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত। এই ভ্যাট আরোপের ফলে বিনিয়োগকারীদের ব্যয় বেড়ে যাবে, ফলে এটা তাঁদের বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করতে পারে। তাহলে বিনিয়োগ যেখানে বাড়া প্রয়োজন, সেখানে তা কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেবে। এমনিতেই বাংলাদেশে বিনিয়োগের পথ মসৃণ নয়। কোম্পানির নিবন্ধন থেকে শুরু করে কারখানার উৎপাদন পর্যন্ত পদে পদে ঝক্কি পোহাতে হয়।
এ ছাড়া করপোরেট করের হারও বেশি। এ কারণে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বহু শিল্পোদ্যোক্তা চীন ত্যাগ করলেও বাংলাদেশে আসেননি। তাঁরা গেছেন থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য