English

30 C
Dhaka
বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪
- Advertisement -

প্রতারকেরা মুক্ত, প্রতারিতেরা কারাগারে: ভিয়েতনামফেরত ব্যক্তিদের দুর্দশা

- Advertisements -
Advertisements
Advertisements

ভাগ্যোন্নয়নের ‍জন্য যে শতাধিক হতভাগ্য নাগরিক জমিজমা বিক্রি করে ভিয়েতনামে গিয়েছিলেন, তাঁরা দেশে ফিরে এসেছেন শূন্য হাতে। কিন্তু সব হারিয়ে দেশে ফিরে এলেও নিজের বাড়িতে যেতে পারেননি। করোনার কারণে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার পর ভিয়েতনামফেরত ৮১ জনসহ ৮৩ জনের ঠাঁই হয়েছে কারাগারে। অপর দুজন এসেছেন কাতার থেকে। অন্যদিকে যে প্রতারক চক্র তাঁদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছিল, তাঁদের কেউ কেউ গ্রেপ্তার হলেও বেশির ভাগ মুক্ত ও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।
বিদেশফেরত এই নাগরিকদের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। সন্দেহবশত তাঁদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে তুরাগ থানার পুলিশ যে অজুহাত খাড়া করেছে, তা অগ্রহণযোগ্য। তুরাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আনোয়ারুল ইসলামের দাবি, ‘এই প্রবাসীরা দিয়াবাড়ি কোয়ারেন্টিন সেন্টারে বসে রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী কাজের পরিকল্পনা করছিলেন বলে সন্দেহ হয়েছে। গোপন সূত্রে আমি এই তথ্য পাই। তাই তাঁদের গ্রেপ্তার করে ৫৪ ধারায় কারাগারে পাঠিয়েছি।’
আনোয়ারুল ইসলামের বক্তব্যে মনে হয়েছে, ভিয়েতনামফেরত প্রবাসী নাগরিকেরা খুবই দুর্ধর্ষ প্রকৃতির। তাঁরা কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা করছিলেন। কী পরিকল্পনা করছিলেন, তা তিনি জানেন না। অথচ কারাগারে পাঠিয়েছেন। ভিয়েতনামফেরত একজন বলেছেন, ‘ভিয়েতনামে আমাদের কেউই কোনো অপরাধে যুক্ত ছিল না৷ আমরা কারাগারেও ছিলাম না৷’ প্রতারণার প্রতিকার চাইতে তাঁরা হ্যানয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়েছিলেন। দু–চারজন দূতাবাসের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। এ কারণে কাউকে গ্রেপ্তার করা কেবল অনৈতিক নয়, বেআইনিও।
আমাদের পুলিশ বিভাগ যদি এতই করিতকর্মা হয়ে থাকে, তাহলে প্রতারিত নয়, প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে তাদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারে। পত্রিকার খবর অনুযায়ী, নয়টি রিক্রুটিং এজেন্সি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে ভিয়েতনামে কর্মী পাঠানোর ছাড়পত্র নিয়েছে। ভিয়েতনামে যেতে প্রত্যেকের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা। ডেইলি স্টার–এর এক প্রতিবেদনে একাধিক ভুক্তভোগীর করুণ কাহিনি প্রকাশিত হয়েছে, যাঁদের একজন চার লাখ টাকা ধার করে গত ডিসেম্বরে ভিয়েতনামে গিয়েছিলেন। এজেন্সি তাঁকে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরি দেওয়ার কথা বললেও সেখানে গিয়ে দেখেন নিয়োগপত্র ভুয়া। দেশে ফিরে আসার পর কারাগারে থাকায় তাঁর পরিবার খুবই অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। অন্যান্য কারাবন্দীর পরিবারের অভিজ্ঞতাও কমবেশি একই রকম।
কেবল ভিয়েতনাম নয়, আরও অনেক দেশে গিয়ে ভাগ্যান্বেষীরা প্রতারণা ও জালিয়াতির শিকার হন। এর জন্য প্রতারিতেরা দায়ী নন। দায়ী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। অথচ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে অভিযান না চালিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে প্রতারিত হওয়া যুবকদেরই। ফলে তাঁদের পরিবার–পরিজন দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছে।
গত সোমবার একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ৮৩ প্রবাসী শ্রমিককে কেন কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হবে না, এই মর্মে রুল জারি করেছেন। যাঁদের প্রতি কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে, তাঁরা হলেন স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, পররাষ্ট্রসচিব, পুলিশের আইজি, প্রধান কারারক্ষক ও তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, উচ্চ আদালত নির্দেশ দিলে বা কারণ দর্শানো জারি করলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তা আমলে নেন না। তাঁরা নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে ভাবেন। যেখানে ৮৩টি পরিবারের জীবন–মরণের প্রশ্ন, সেখানে সংশ্লিষ্ট সবার কাছ থেকে সংবেদনশীলতা প্রত্যাশিত।
অবিলম্বে কারাগারে আটক ৮৩ প্রবাসী নাগরিককে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হোক। একই সঙ্গে সন্দেহের বশে যে পুলিশ কর্মকর্তা এতজন নাগরিককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছেন, তিনি কোন বিবেচনায় এই কাজ করেছেন, তার একটি জবাবদিহি প্রয়োজন। আইন প্রয়োগের অর্থ এই নয় যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনের কোনো বিবেচনাবোধ কাজ করবে না।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন