English

25 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, মে ১, ২০২৫
- Advertisement -

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাগ্রত দুর্নীতি: ফান্ড ঘুমায় লুট জাগে

- Advertisements -

যেখানে শিক্ষার আলো জ্বলার কথা, সেখানে যদি অন্ধকার ঘনীভূত হয়, তবে তা শুধু দুর্ভাগ্য নয়, জাতিগত ব্যর্থতা। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ‘স্লিপ ফান্ডের ৪৮০ কোটি টাকার অর্ধেকই লোপাট’ হয়েছে। সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পরিচালনায় প্রতিবছর স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান (স্লিপ) ফান্ডের আওতায় এই পরিমাণ টাকা দিয়ে থাকে।

এই ফান্ডে জমাকৃত টাকাই লোপাট হয়ে গেছে।তাদের সেই ঘুম ভাঙল আজ। এই তহবিলই কি শুধু ঘুমিয়েছিল, নাকি এর পাহারাদাররাও ছিলেন গভীর ঘুমে? এমন না হলে এমন দুর্ধর্ষ তছরুপ সম্ভব কিভাবে? দুঃখজনক হলো, বেশির ভাগ প্রধান শিক্ষক এই ফান্ড লোপাটের হোতা। তাঁরা শিক্ষার্থীদের কী শেখাবেন!

দেশের প্রতিটি পয়সা জনগণের রক্ত-ঘামে অর্জিত। স্লিপ ফান্ডের অর্থও সেই হিসাবের বাইরে নয়।

কিন্তু যেভাবে এই টাকাকে ‘কেউ না কেউ’ নিজের সম্পত্তি ভেবে সরিয়ে ফেলেছে, তা শুধু অপরাধ নয় রাষ্ট্রের মৌলিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার ওপর এক নির্মম চপেটাঘাত।

যে অর্থ ফেরত যাওয়ার কথা ছিল সরকারি কোষাগারে, তা কিভাবে ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত লালসার শিকার হলো—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, দায় শুধু লুটেরাদের নয়, বরং গোটা প্রশাসনিক বূহ্যের।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভেতরেই যদি এমন ঢিলেঢালা হিসাব রক্ষার সংস্কৃতি গড়ে ওঠে, তাহলে তহবিল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির দাবিকে কেবল ‘দর্শন’ বলে মনে হবে। প্রশ্ন হলো এই টাকা সরানোর মেধা, কৌশল ও সুযোগ যারা সৃষ্টি করেছে, তাদের পরিচয় কী? এ কি নিছক কারিগরি ফাঁকফোকর, নাকি উচ্চপদস্থ ছত্রচ্ছায়ায় লালিত দুর্নীতির আরেকটি দৃষ্টান্ত?

আরেকটি আশঙ্কাজনক দিক হলো যেভাবে এই তহবিলের হিসাব অস্বচ্ছ থেকে গেছে, তাতে প্রশ্ন ওঠে এমন আর কত ‘ঘুমন্ত’ অর্থ বর্তমানে ছড়িয়ে আছে মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোতে? এই ধরনের ফান্ড ব্যবস্থাপনায় যদি স্বয়ংক্রিয় পর্যবেক্ষণ, ডিজিটাল অডিট ও মাসিক জন-প্রকাশ্য রিপোর্টিং থাকত, তবে কি এত বড় লোপাট সহজ হতো? এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আমাদের রাষ্ট্রীয় আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ‘ঘুম’ নয়, বরং সচেতনভাবে গড়া ‘অন্ধকার অঞ্চল’ রয়েছে, যেখানে দায় নেই, জবাবদিহি নেই, কেবল লোপাটের সুযোগ আছে।

যখন নাগরিকরা মৌলিক চাহিদার প্রশ্নে রাষ্ট্রের কাছে জবাব চায়, তখন সরকারের অভ্যন্তরেই যদি কোটি কোটি টাকা উবে যায়, তখন সেটি আর শুধু দুর্নীতি নয়, হয়ে ওঠে রাষ্ট্রীয় অমানবিকতার প্রতীক।

এই অর্থ অপচয় কেবল টাকায় পরিমাপযোগ্য নয়, এটি আস্থার লোপাটও। এখন সময় এই তহবিল লুটের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত, অপরাধীদের চিহ্নিতকরণ ও দৃশ্যমান শাস্তির। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যবস্থাপনায় ই-গভর্ন্যান্স, ব্লকচেইনভিত্তিক লেনদেন নজরদারি এবং স্বাধীন অডিট ট্র্যাকিং ব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে। ঘুম ভাঙাতে হবে কেবল ফান্ড নয়, পুরো ব্যবস্থাকেই।

নয়তো একদিন মানুষই জেগে উঠবে আর সে জাগরণ কতটা রূঢ় হবে, তার জন্য কেউ প্রস্তুত থাকবে না।
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন