আঠারো শতকের কবি রামনিধি গুপ্ত জিজ্ঞাসার সুরে বলেছিলেন, ‘বিনে স্বদেশি ভাষা পুরে কি আশা।’ না, পুরে না। তা তিনি ভালো করেই জানতেন। জানতেন আরো বড় বড় মনীষী। আমাদের বিজ্ঞানীশ্রেষ্ঠ আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, কুদরাত-এ-খুদাসহ আরো অনেক বিজ্ঞানী বিজ্ঞানের জটিল বিষয়ে বাংলায় প্রবন্ধ লিখেছেন। বই লিখেছেন। চমৎকার তাঁদের রচনাশৈলী।
অথচ আজ অনেকেই বলেন, ‘আমি তো বাংলায় লিখতে পারি না।’ লজ্জায় তখন বলতে ইচ্ছা করে ‘ধরণি দ্বিধা হও।’ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বাংলায় লেখাপড়া করে আমাদের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা নিতে গিয়ে হোঁচট খায়। সেখানে ইংরেজিতে পড়াশোনা করতে হয়। ভাষার স্বাচ্ছন্দ্য না থাকায় বিষয়ও বোধগম্যতা হারায়।
ফলে সনদ অর্জন হয়, শিক্ষা এগোয় না। বলা হয়, বাংলায় পড়ানোর মতো বই নেই। রেফারেন্স বা তথ্যসূত্র বই নেই। কেন নেই? কজন শিক্ষক সাবলীল বাংলায় বই লেখার কাজে এগিয়ে এসেছেন? প্রকাশিত বই না হোক, ফটোকপি করে ছাত্রদের হাতে বাংলায় সহায়ক পাঠ্য তুলে দিয়েছেন কজন শিক্ষক? জার্মান, ফরাসি, চীনা, জাপানি, কোরিয়ানসহ আরো অনেক ভাষায় উচ্চশিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। তাহলে আমরা কেন স্বদেশি ভাষায় উচ্চশিক্ষার আয়োজন করতে পারছি না?
বঙ্গবন্ধুর কাছে মাতৃভাষার মর্যাদা ও প্রয়োজন স্পষ্ট ছিল। স্বাধীন দেশে শত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তিনি রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে বাংলা প্রচলনের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
জাতিসংঘেও তিনি বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলায় বই রচনাকে তিনি উৎসাহিত করেছিলেন। বাংলা একাডেমি কিছু উদ্যোগও নিয়েছিল। তারপর সব কিছু থেমে গেছে। বিজ্ঞজনরা মনে করেন, বাংলার প্রচলনে প্রধান বাধা আমাদের ঔপনিবেশিক মানসিকতা, যা দূর করা জরুরি।