দেশের শিল্পায়নপ্রক্রিয়া দ্রুততর করতে সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। ৩০টির বেশি অঞ্চলের উন্নয়নকাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠী এরই মধ্যে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। দেশি-বিদেশি আরো অনেক বিনিয়োগ আসছে। এ পর্যায়ে এসে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সবাইকে হতাশ করছে। তারা বিনিয়োগকারীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে। বলা হয়েছিল, সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করলে জমির মূল্যের ওপর কোনো ধরনের ভ্যাট দিতে হবে না; গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির মতো পরিষেবা পেতে সার্ভিস চার্জ বা সেবা খরচ থাকবে না; ১০ বছরের কর অবকাশসহ আরো বেশ কিছু সুবিধা থাকবে। এখন বলা হচ্ছে, এসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া সম্ভব নয়। বেজার এমন আচরণে ব্যবসায়ীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। প্রতিকারের জন্য তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বেজার এমন সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলে নতুন বিনিয়োগ নিরুৎসাহ করবে।
বেজার প্রসপেকটাস ও ওয়েবসাইটে বিনিয়োগকারীদের জন্য ভ্যাট ও সার্ভিস চার্জমুক্ত সেবা ও কর অবকাশ সুবিধাসহ নানা ধরনের লোভনীয় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তাতে অনেক বিনিয়োগকারী আকৃষ্টও হয়েছিলেন। এখন সেসব সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাহার করে নেওয়াটা নৈতিক নয়। এটি বেজার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট তৈরি করবে। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বেজা এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা পর্যন্ত করেনি। হঠাৎ করেই গত ৩ সেপ্টেম্বর বেজা থেকে জারি করা সার্কুলারে বলা হয়, সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প-কারখানায় পানির বিল দেওয়ার পাশাপাশি বাড়তি ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দিতে হবে।
একইভাবে গ্যাস সংযোগ নেওয়ার পর গ্যাস বিল দেওয়ার পাশাপাশি বাড়তি ৫ শতাংশ সেবা খরচ গুনতে হবে। বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও বাড়তি ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। একই সঙ্গে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ইজারা নেওয়া জমির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং রক্ষণাবেক্ষণ চার্জও। ১০ বছরের কর অবকাশ সুবিধাও থাকবে না। এমনকি শিল্প-কারখানা থেকে তৈরি হওয়া ময়লা পানি পরিশোধন করতে চাইলে সেখানেও ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। আবার তরল বর্জ্য শোধন করতে চাইলে সেখানেও আলাদা করে ৫ শতাংশ সেবা খরচ দিতে হবে ব্যবসায়ীদের। বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশনের (বেজিয়া) পক্ষ থেকে বেজার এমন সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করে অবিলম্বে সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ আকর্ষণে এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলছে। আমাদের প্রতিবেশী অনেক দেশেই বিভিন্ন পরিষেবার সার্ভিস চার্জ অব্যাহতিসহ অনেক লোভনীয় সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছে। সেসব দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হলে আমাদেরও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। কিন্তু আমরা করছি উল্টোটা। প্রতিশ্রুত সুযোগ-সুবিধাও প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা আশা করি, নীতিনির্ধারকরা জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করবেন এবং বেজা তাদের একতরফা সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেবে।
The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/pk12
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন