যক্ষ্মা এখনো বাংলাদেশের একটি প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা। রোগের বিস্তৃতি নিয়ে সঠিক পরিসংখ্যানও নেই। সারা দেশে যক্ষ্মা নির্ণয় ও চিকিৎসার ব্যাপক আয়োজন থাকলেও অসচেতনতা ও অবহেলার কারণে অনেকেই চিকিৎসার বাইরে থেকে যায়।
রোগী কাবু হয়ে গেলে যখন হাসপাতালে আনা হয়, তখন অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২১ সালে যক্ষ্মা শনাক্ত হয় তিন লাখ ছয় হাজার ৭০২ জনের, আর মারা যায় দুই হাজার ৯৬৮ জন। ২০২০ সালে শনাক্ত হয় দুই লাখ ৩০ হাজার ৮৮০ জন, মারা যায় তিন হাজার ২৩৩ জন। অর্থাৎ ২০২১ সালে শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
সারা পৃথিবীতেই যক্ষ্মার বিস্তৃতি চরম উদ্বেগজনক। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২০০ কোটি এবং প্রতিবছর মারা যায় ১৫ কোটি মানুষ। পৃথিবীতে যে ৩০টি দেশে যক্ষ্মার প্রকোপ বেশি বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল শুক্রবার সারা বিশ্বেই পালিত হয়েছে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস।
চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, শরীরের নানা অঙ্গেই যক্ষ্মা হতে পারে। তবে ফুসফুসের যক্ষ্মার হারই সবচেয়ে বেশি এবং এটি অত্যন্ত সংক্রামক। রোগীর হাঁচি-কাশির সঙ্গে জীবাণু বেরিয়ে এসে অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে। রোগীর থালাবাসন বা খাবার ভাগ করে খেলেও জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।
এ কারণে ঘিঞ্জি ও ঘনবসতিপূর্ণ জীবনযাপনে যক্ষ্মার প্রকোপ বেশি দেখা যায়। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতেও যথেষ্ট সচেতন থাকলে যক্ষ্মার সংক্রমণ অনেকাংশেই কমানো যায়। জ্বর জ্বর ভাব, ওজন কমে যাওয়া, দুই সপ্তাহের বেশি কাশি হলো ফুসফুসের যক্ষ্মার সাধারণ লক্ষণ। এ ছাড়া গলার গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া, মেরুদণ্ডে অস্বস্তি, পেটে পানি আসা ও ফুলে যাওয়া ইত্যাদি আরো কিছু যক্ষ্মার লক্ষণ। রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় দেশে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ব্যাপক আয়োজন রয়েছে। বর্তমানে ৪৪টি বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, সাতটি বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং এনজিও ক্লিনিকে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। বিনা মূল্যে ওষুধ দেওয়া হয়। তার পরও এ রোগ কমছে না মূলত সচেতনতার অভাবে।
অনেকে চিকিৎসা শুরুর কয়েক দিন পর ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দেয়। এতে জীবাণু ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। এসব কারণে যক্ষ্মা নির্মূলে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর আরো জোর দিতে হবে। সমাজকেও দায়িত্ব নিতে হবে।