প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, জামিনে বেরিয়ে একই ধরনের অপরাধ ঘটানোর অভিযোগে সারা দেশে গত দেড় বছরে দুই হাজারের বেশি আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়েছে পাঁচ শতাধিক আসামি।
প্রকাশিত খবরে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২০ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুরে একই পরিবারের চারজনকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাগর আলী নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এরপর টাঙ্গাইল কারাগারে ছিলেন সাগর। সাড়ে তিন বছর পর জামিনে বের হয়ে সাগর গত ৩০ সেপ্টেম্বর সাভারের আশুলিয়া জামগড়া এলাকায় মোক্তার হোসেন, তাঁর স্ত্রী সাহিদা ও তাঁদের ১২ বছরের শিশুসন্তান মেহেদীকে একইভাবে হত্যা করেন।সম্প্রতি সাগরকে আবার গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। ২০০৯ সালে চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকায় এরশাদ নামের এক ব্যক্তিকে খুন করে দুর্বৃত্তরা।সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে এই খুনের ঘটনায় ইরান নামের একজনসহ তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এক বছরের বেশি সময় হাজতবাসের পর জামিনে বেরিয়ে হত্যা মামলার সাক্ষী এক নারীকে খুন করে আসামিরা। এ ঘটনায় আসামি ইরানকে আবার গ্রেপ্তার করে র্যাব।এমন অবস্থা চলতে থাকলে সমাজ সামনে এগোনোর বদলে পশ্চাদগামী হয়ে পড়তে পারে। প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব।
এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বটি সুচারুরূপে পালন করতে হবে। প্রয়োজনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে।আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী বলছে, প্রতি মাসে তারা জামিনে থাকা অনেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে, যারা জেল থেকে বেরিয়ে আবার অপরাধ ঘটায়।জামিন একজন ব্যক্তির মৌলিক অধিকার। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জামিন দেওয়ার এখতিয়ার আদালতের। কোনো অভিযুক্তকে কোনো অপরাধে আদালত যখন কারাগারে দেন, তার মানে হচ্ছে সেই অপরাধটি সে যেন না করতে পারে।কোনো অভিযুক্ত জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার একই অপরাধ করলে বিষয়টি আদালতের নজরে আনার দায়িত্ব হচ্ছে পুলিশ ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের। এসব অপরাধী যদি জামিন পেয়ে একই অপরাধে যুক্ত হয়, তাহলে সেটি তাদের ব্যর্থতা। কোনো অপরাধী ধরা পড়ে ফের অপরাধে জড়ালে বা শর্ত ভঙ্গ করলে আইনত জামিন বাতিলের সুযোগ রয়েছে।সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। জামিন পেয়ে আসামিরা যেন আবার অপরাধ ঘটাতে না পারে, এ জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কঠোর নজরদারি প্রয়োজন বলে মনে করছেন আইন ও অপরাধ বিষয়ক বিশ্লেষকরা।জামিনে বেরিয়ে কেউ একই অপরাধ করলে সরকারি আইনজীবীদের পদক্ষেপে তার জামিন বাতিল হতে পারে।সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করা যায় না বলেই সমাজে অপরাধ বাড়ছে। জঘন্য অপরাধীরা সমাজকে কলুষিত করছে।