এই পরিস্থিতিতে ঋণপ্রাপ্তির অনিশ্চয়তা এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক দুর্বলতা—এই দুইয়ের সমন্বয়ে দেশের অর্থনীতি এক কঠিন গোলকধাঁধায় পড়েছে।
সরকার আইএমএফের শর্তাবলি একবারে মেনে না নিয়ে ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের কৌশল নিয়েছে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পুনর্বিন্যাসে কিছুটা অগ্রগতি হলেও মুদ্রা বিনিময় হারের প্রশ্নে কিছুটা অচলাবস্থা রয়েছে। সরকারের ভাষ্য মতে, এই মুহূর্তে ডলারের দাম সম্পূর্ণরূপে বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগতে পারে।
এই দ্বিমুখী চাপে দেশের অর্থনীতি এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন। আইএমএফ ঋণের অনিশ্চয়তা যেমন বহিরাগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে, তেমনি অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাগুলো সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাকে আরো কঠিন করে তুলছে। শুধু বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভর করে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন সম্ভব নয়।
সরকারকে এখন অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি, রপ্তানি বহুমুখীকরণ এবং বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং শিল্প খাতের সমস্যা সমাধানে দ্রুত মনোযোগ দেওয়া অপরিহার্য। নীতি সহায়তা এবং সুশাসনের অভাবে বেসরকারি খাত যে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে, তা অর্থনীতির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি বড় হুমকি।
সরকারকে একদিকে যেমন আইএমএফের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাতে হবে, তেমনি অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। কাঠামোগত সংস্কার এবং নীতিগত পরিবর্তন ছাড়া অর্থনীতির এই অনিশ্চয়তার আবর্ত থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হবে। সময়োপযোগী এবং বাস্তবসম্মত পদক্ষেপের মাধ্যমেই দেশের অর্থনীতিকে একটি স্থিতিশীল ও টেকসই ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।