জনগণের স্বার্থ রক্ষা করাটাই জনপ্রতিনিধিদের প্রধান দায়িত্ব। জনপ্রতিনিধি হিসেবে সংসদ সদস্যরা জনগণের পক্ষে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভূমিকা রাখবেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রতিনিধির সেই চিরচেনা সংজ্ঞাটি যেন পাল্টে গেছে। অবশ্য সবাই যে একই রকম করেন, তা নয়। তবে কিছু কিছু সংসদ সদস্যের কর্মকাণ্ড সরকারকে রীতিমতো বিব্রত করছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনে বিজয়ী দলটির একাধিক সংসদ সদস্য বারবার গণমাধ্যমে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য। একজন সংসদ সদস্য প্রবাসে অর্থপাচার ও মানবপাচারের মতো ঘৃণ্য অপরাধে জড়িয়েছেন। এই অপরাধে কুয়েতের আদালত চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। সর্বশেষ যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্যকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে যাঁদের দেশ ও জনগণের স্বার্থ নিয়ে কাজ করার কথা, তাঁদের কারো কারো বিরুদ্ধে মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করার এবং কথামতো কাজ না করলে সরকারি কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করার মতো অনেক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
একজন পরিবেশবাদী আইনজীবীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করতে থানার ওসিকে দেওয়া তাঁর পরামর্শ ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে দেখছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। যদিও সংসদের বাইরে একজন এমপির অনৈতিক আচরণ, ক্ষমতার দাপট দেখানো এবং চাপ প্রয়োগ করার ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে স্পিকারের ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ থাকলেও এখন পর্যন্ত সেই ব্যবস্থা গ্রহণের নজির নেই। যশোরের আলোচিত সংসদ সদস্যের মতো বিভিন্ন সময় সমালোচিত সংসদ সদস্যদের তালিকাটা ছোট নয়। কিন্তু দল থেকে সতর্ক করা ছাড়া তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অনেক কিছুতে অগ্রগতির পাশাপাশি যেসবে বাংলাদেশ পিছিয়েছে, তার অন্যতম হচ্ছে রাজনৈতিক সংস্কৃতি। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ওপরে ডালপালা গজিয়েছে, তৃণমূলেও ছড়িয়েছে শিকড়। সংসদ সদস্যরা সাধারণ মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আইন প্রণেতা হওয়ার সুযোগটি লাভ করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাঁরা এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করেন। সরকার বা দল নয়, নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা কর্মকাণ্ডে তাঁর নীতি-নৈতিকতার তোয়াক্কা করেন না। অনেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধেই মাদক কারবারের অভিযোগও আছে।
দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার স্বার্থেই এসব জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। উদাহরণ সৃষ্টি করা গেলে রাজনৈতিক দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে আমরা মনে করি।