English

26 C
Dhaka
শুক্রবার, ডিসেম্বর ৬, ২০২৪
- Advertisement -

এক কোটি বিশেষ কার্ড: তালিকা তৈরিই বড় চ্যালেঞ্জ

- Advertisements -

বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়া হলে যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানো অসম্ভব নয়, ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে তা আবারও প্রমাণিত হলো। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে দেশের পাইকারি বাজারে সয়াবিনের দর বাড়ছিল। সরবরাহও কমছিল। ফলে এ মাসের শুরুতে পাইকারি বাজারে প্রতি লিটারে দর ওঠে প্রায় ১৫০ টাকা। গত বুধবার তা কমে ১৪১ টাকায় নেমে আসে।

ধারণা করা যায়, সরবরাহ বাড়ানো, পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পাম তেল আমদানিতে ভ্যাট ১৫ থেকে ১০ শতাংশ কমিয়ে ৫ শতাংশ করায় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। অন্যদিকে মজুতদারদের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযানও কিছুটা ভূমিকা রেখেছে। যে ব্যবসায়ীরা ভোজ্যতেল বেশি মজুত করে ক্রেতাদের পকেট কেটেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষকে সহায়তা দিতে এক কোটি বিশেষ কার্ড দেওয়ার কথা বলেছেন। এ কার্ডের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল ও চিনি দেওয়ার কথা আছে। আর দুই সপ্তাহ পরই রোজা শুরু হবে। সে সময় এসব পণ্যের চাহিদা আরও বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা টার্গেট করেছি, এক কোটি মানুষকে আমরা স্পেশাল কার্ড দেব, যেটা দিয়ে তারা ন্যায্যমূল্যে জিনিস কিনতে পারবে। যে ৩৮ লাখকে আমরা টাকা দিচ্ছি, তারা তো থাকবে, তার বাইরে আরও এক কোটি লোককে দেব। এ ছাড়া ৫০ লাখ লোককে একটা কার্ড দেওয়া আছে, সেটা থেকে তারা ১০ টাকায় চাল কিনতে পারে। সেই ব্যবস্থাও করা আছে।’

প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। এর মাধ্যমে সরকার স্বীকার করে নিল, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে কেবল টিসিবির মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করলে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এমন ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে সব গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনধারণ কিছুটা হলেও সহনীয় হয়। প্রশ্ন হলো প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত এক কোটি মানুষের তালিকা কে করবে, কীভাবে করবে? সরকারের কাছে কোনো ডেটাবেইস নেই। ফলে তাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের ওপরই নির্ভর করতে হবে। অতীতে এ ধরনের তালিকা নিয়ে অনেক নয়ছয় হয়েছে। প্রকৃত অভাবী অনেক মানুষকে বাদ দিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অপেক্ষাকৃত সচ্ছল মানুষকে তালিকাভুক্ত করেছেন। আমরা চাই না এবারও তার পুনরাবৃত্তি হোক। অতএব, তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। আরেকটি সমস্যা হলো গ্রামে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মোটামুটি সবাইকে চিনলেও শহরাঞ্চলের জনপ্রতিনিধিরা অনেককে চেনেন না। শহরের গরিব বাসিন্দাদের একাংশ সেখানকার ভোটার নন। যৌক্তিক কারণেই তাঁরা গ্রামেই ভোটার হয়েছেন। কোনোভাবেই তাঁদের বাদ দেওয়া যাবে না।

আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, প্রকৃত অভাবী ও গরিব মানুষকে তালিকাভুক্ত করা হবে। প্রাথমিকভাবে সরকার জুন পর্যন্ত এ সুবিধা দেওয়ার কথা বললেও সময় বাড়ানোর প্রয়োজন হবে, যদি পণ্যের দাম না কমে। যে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করছে বলে সরকার দাবি করে, সেই দেশে ট্রাকের পেছনে ছিন্নবসন অভাবী মানুষের হুড়োহুড়ি মোটেই মর্যাদাকর নয়। সহায়তা বিতরণে একটি উন্নত ও বাস্তবসম্মত উপায় বের করতেই হবে। তবে এ মুহূর্তে তালিকা তৈরিই বড় চ্যালেঞ্জ।

Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন