অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অবকাঠামো উন্নয়নও এখন চোখে পড়ার মতো। নতুন নতুন ভবন নির্মিত হচ্ছে। কিন্তু নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি কি নিশ্চিত করা হচ্ছে? প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, গত ২৬ জানুয়ারি রাজধানীর দক্ষিণখানের ফায়দাবাদে একটি নির্মাণাধীন ভবনে কাজ করার সময় পা ফসকে নিচে রাস্তায় এক পথচারী নারীর ওপর পড়েন এক নির্মাণ শ্রমিক। এতে দুজনই গুরুতর আহত হয়ে ওই দিনই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
বিলস বলছে, নির্মাণকাজে ভালো সিঁড়ি ও পর্যাপ্ত আলোর অভাব, এলোমেলোভাবে রড, বালু ও ইট রাখা, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাজাল না থাকা অথবা নাজুক জালের ব্যবহার, হেলমেট, গ্লাভসের ব্যবস্থা না করা, খালি পায়ে কাজ করা এবং অসচেতনভাবে আবদ্ধ স্থানে প্রবেশ, ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতির ব্যবহার, কম বিশ্রাম, দুর্বল মাচা, দেয়ালচাপা বা মাটিচাপা পড়া, ঝুলন্ত অবস্থায় কাজের সময় বেল্ট ব্যবহার না করা, ভালো জুতা বা বুট ব্যবহার না করা, আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব এবং ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক লাইনের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পাচ্ছে না পথচারীও।
নির্মাণকাজের সময় দুর্ঘটনায় কোনো শ্রমিক মারা গেলে ক্ষতিপূরণের সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। শ্রম আইন অনুযায়ী, কর্মস্থলে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিয়োগকারীর। শ্রমিকের ব্যক্তিগত সুরক্ষা যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা ছাড়া কাউকে কাজে নিয়োগ করা যাবে না। আইনে এমন বাধ্যবাধকতা থাকলেও রাজধানীর একাধিক নির্মীয়মাণ ভবনে গিয়ে এসব মানতে দেখা যায়নি। বেল্টসহ অন্যান্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই কাজ করছেন শ্রমিকরা।
অন্যদিকে মালিকপক্ষের গাফিলতি থাকলেও দরিদ্র শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরা ভবন মালিক কিংবা ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলা করার সাহস করেন না। সামান্য ক্ষতিপূরণ পাওয়া গেলেই তাঁরা সন্তুষ্ট থাকেন। এ কারণে প্রায় প্রতিটি ঘটনায় পার পেয়ে যান দায়ী ব্যক্তিরা। আবার নির্মীয়মাণ ভবনের নিচ দিয়ে চলাচলের সময় ওই ভবন থেকে নির্মাণসামগ্রী পড়ে যদি কোনো পথচারী মারা যায়, সে ক্ষেত্রে প্রতিকার চাওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই।
নির্মাণ শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।