বায়ুদূষণের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশ প্রথম স্থান অর্জন করেছে। বায়ুদূষণের কারণে সৃষ্ট রোগব্যাধিতে বাংলাদেশে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। সেই মৃত্যুর তালিকা আরো বৃদ্ধি করছে শব্দদূষণ, পানিদূষণ, মাটিদূষণসহ অন্যান্য দূষণ। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন শহরে শব্দদূষণের মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।
আর এই শব্দদূষণে প্রধান ভূমিকা পালন করছে যানবাহনে ব্যবহৃত হর্নের উচ্চ শব্দ। জানা যায়, হাইড্রোলিক হর্ন নিষিদ্ধ করা হলেও প্রায় ৩০ শতাংশ যানবাহনে এখনো এই হর্ন ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে মানুষের নানা রকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যা হচ্ছে। অথচ শব্দদূষণ কমাতে প্রায় কোনো পদক্ষেপই চোখে পড়ে না।
শব্দদূষণ সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা অত্যন্ত কম। রাস্তায় যানজটে আটকে থাকা ছোট-বড় অনেক যানবাহনের চালককে অনবরত হর্ন বাজাতে শোনা যায়। এটি যে পথচারী বা সাধারণ মানুষের ক্ষতির কারণ হচ্ছে তা তাদের উপলব্ধিতেই নেই। আবার যানবাহনে কত উচ্চ শব্দের হর্ন লাগানো যায় তা নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলে। বেশির ভাগ গাড়িতেই একাধিক উচ্চ শব্দের হর্ন থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) মতে, সাধারণত ৬০ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ সাময়িক বধিরতার কারণ হতে পারে। শব্দের মাত্রা ১০০ ডেসিবেলের ওপর হলে তা স্থায়ী বধিরতার কারণ হতে পারে। বধিরতা ছাড়াও হৃদরোগ, নিদ্রাহীনতা, স্নায়বিক ও মানসিক নানা রোগের কারণ হতে পারে অতিরিক্ত শব্দদূষণ। ডাব্লিউএইচওর মতে, শয়নকক্ষে শব্দের মাত্রা হওয়া উচিত ২৫ ডেসিবেলের কম; ঘর, অফিস বা অন্যত্র ৪০ ডেসিবেলের কম থাকা বাঞ্ছনীয়। শব্দ এর চেয়ে বেশি মাত্রায় হলেই তাকে শব্দদূষণ হিসেবে গণ্য করা হয়। এতে মানুষের ক্ষতি হয়।
২০১৭ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা যায়, শব্দদূষণের কারণে বাংলাদেশের ১১.৭ শতাংশ মানুষের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডেসিবেলের হিসাবে সবচেয়ে বেশি দূষণ পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে (১৩৩ ডেসিবেল)। এর পরই রয়েছে ঢাকা ১৩২ ডেসিবেল, খুলনা ১৩২ ডেসিবেল, সিলেট ১৩১ ডেসিবেল, বরিশাল ১৩১ ডেসিবেল, ময়মনসিংহ ১৩১ ডেসিবেল, রংপুর ১৩০ ডেসিবেল। ২০২০ সালের শেষ দুই মাসে পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকায় শব্দদূষণ গড়ে ১০ শতাংশের মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। শব্দদূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ট্রাফিক পুলিসসহ সড়কে কর্মরতদের। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় ৮ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশ স্থায়ীভাবে শ্রবণক্ষমতা হারানোর পর্যায়ে রয়েছে, ১২ শতাংশের অবস্থা খুবই খারাপ, ১৫.৫ শতাংশের ফোনে কথা শুনতে অসুবিধা হয় এবং ১৯ শতাংশ হাই ভলিউমে না দিলে টেলিভিশনের অনুষ্ঠান শুনতে পান না। এর পরও ট্রাফিক পুলিশকে যানবাহনের উচ্চ শব্দ নিয়ন্ত্রণে তেমন ভূমিকা রাখতে দেখা যায় না।
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন আইন থাকলেও সেসবের বাস্তবায়ন নেই। বয়সভেদে শব্দদূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার শিশুরা। বধির-পরবর্তী প্রজন্ম দেখতে না চাইলে আমাদের অবিলম্বে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে।