শিক্ষার সূতিকাগার প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রাথমিকে আদর্শ শিক্ষা পেলে তার ওপর ভর করে পরবর্তী শিক্ষাজীবন চলে মসৃণভাবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের যেমন কিছু সাফল্য আছে, তেমনি ব্যর্থতাও অনেক। প্রাথমিক পর্যায়ে শতভাগ শিশু বিদ্যালয়ে এলেও ২০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করতে পারে না।
‘সবার জন্য শিক্ষা’—এই লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু কালের কণ্ঠে গতকাল প্রকাশিত একটি খবর আমাদের নতুন এক প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে। খবরে বলা হয়েছে, চার বছর আগে সরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার দক্ষিণ সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বন্ধ হওয়ার পথে। এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক মাত্র দুজন। শুরু থেকে তাঁরা প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে বেতন পেতেন। কিন্তু দেড় বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিদ্যালয় স্থাপনের পর দুই বছর সরকারি বরাদ্দ ছিল। এরপর স্থানীয়ভাবে এটি চালানোর কথা। এই বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার অনুমোদন আছে। ফলে দ্বিতীয় শ্রেণির পর শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে। কাছাকাছি কোনো বিদ্যালয় না থাকায় শিক্ষার্থীরা দূরে গিয়ে পড়তে চায় না। দেখা যাচ্ছে, এই স্কুলের সমস্যা মূলত দুটি। একদিকে দ্বিতীয় শ্রেণির পর কোনো অনুমোদন নেই। দ্বিতীয়ত শিক্ষকদের বেতন নেই। অথচ বিদ্যালয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।
দেশে প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর বিনা মূল্যে বই বিতরণ করা হয়। ঝরে পড়া রোধ করতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল চালুু করা হয়েছে। কিন্তু তার পরও শহর ও গ্রামের স্কুলের লেখাপড়ার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে।
দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে সমমানের করে গড়ে তোলা দরকার। শিক্ষার প্রথম ভিত্তি হলো প্রাথমিক শিক্ষা। কিন্তু আমাদের দেশে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিক্ষকদের সরকারীকরণ করেছিলেন। শিক্ষা বিস্তার ও শিক্ষকদের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য।
বর্তমান সরকারের আমলে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা খাতে তিনটি বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। অনেক বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হয়েছে। তাহলে ত্রিপুরা পাড়ার এই বিদ্যালয়টি কেন এভাবে থাকবে?
লেখাপড়ার মানোন্নয়ন প্রয়োজন। শিক্ষা যেন সর্বজনীন হয়, তা রাষ্ট্রকেই দেখতে হবে। ত্রিপুরা পাড়ার বিদ্যালয়টির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/8x48