যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই দেশের বাজারে চালের দাম বেড়েই চলেছে। বোরো মৌসুম শেষ হয়েছে বেশিদিন হয়নি। আমন মৌসুমেও ধান উৎপাদন কম হয়নি। ফলে এখন চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু তার পরও বাজারে চালের দাম বাড়ছে কেন? কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ বলছে, বড় বড় মিলার প্রচুর ধান মজুদ করেছেন। এখন ধানের দাম বাড়ানোর জন্য তাঁরা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন।
ধান-চাল আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের মতে, দীর্ঘস্থায়ী বন্যা আর বন্যার কারণে আমনের উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ব্রির এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্য চাহিদা পূরণ করেও আগামী বছরের জুন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। ব্রির প্রতিবেদন বলছে, এ বছর অতিবৃষ্টিতে কয়েক দফা বন্যায় ৩৫টি জেলার আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সারা বছরের উৎপাদন ও চাহিদা বিবেচনা করলে দেশে খাদ্য ঘাটতির ‘আপাতত কোনো আশঙ্কা নেই’।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, চলতি আমন মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্য ধরা হয়েছে এক কোটি ৫৬ লাখ টন। এর মধ্যে চার দফা বন্যায় লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আড়াই থেকে তিন লাখ টন ধান কম উৎপাদন হতে পারে। তবে সেটার প্রভাব এখন পড়ার কথা নয়। কারণ আমন মৌসুম এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। আর আগামী বোরো মৌসুমে চার লাখ টন ধান উৎপাদন বাড়বে। সে হিসাবে এ ঘাটতিও থাকবে না বলেই আশা করা হচ্ছে। কিন্তু তার পরও চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী।
অনেকের ধারণা, দেশে যথেষ্ট চাল আছে; কিন্তু সেই চাল ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে মজুদ রেখেছে। সরকারের মজুদ কমে যাওয়ায় চালের বাজারের পুরো নিয়ন্ত্রণ এখন অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে। চালের বাজারে এই অস্থিরতার পেছনে আমদানিকারক, পাইকারি ব্যবসায়ী ও মিলারদের হাত রয়েছে বলেও অনেকের ধারণা। অভিযোগ উঠেছে, চালের বাজার অস্থিতিশীল করতে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। সিন্ডিকেটটি ব্যবসায়ীদের মধ্যে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
ধানের সংকটে চালের দামও বাড়তে থাকায় সরকার চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারত থেকে সরকারি পর্যায় আমদানি করা চালের প্রথম চালান এখন চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। জাহাজ থেকে চাল নামানোর পর ট্রাকে করে সেই চাল সরকারি খাদ্যগুদামে রাখা হবে। একইভাবে মোংলা বন্দর দিয়ে আসা চালও সরকারি গুদামে রাখা হবে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
চালের বাজারে এ ধরনের সংকট নতুন নয়। এ থেকে দ্রুত উত্তরণের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি পর্যায়ে যে চাল আমদানি করা হয়েছে, তা দিয়ে অবিলম্বে বিকল্প বিপণনব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন