English

27 C
Dhaka
শনিবার, জুন ৭, ২০২৫
- Advertisement -

ন্যায়বিচার নিশ্চিত করুন: মানবতাবিরোধী অপরাধ

- Advertisements -
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে শত শত হত্যাকাণ্ডসহ ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছিল। এগুলোর পেছনে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকার ও তাঁর দল আওয়ামী লীগের ভূমিকা দেশের গণমাধ্যম, সরকারের তদন্ত সংস্থা এবং মানবাধিকার সংগঠনের বিভিন্ন প্রতিবেদনে এরই মধ্যে প্রকাশিত।এ ছাড়া জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) অনুসন্ধানী দলের প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে শেখ হাসিনা সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য। এবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারকের বেঞ্চ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দাখিল করা ‘আনুষ্ঠানিক অভিযোগ’ আমলে নিয়েছেন। একই সঙ্গে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।প্রসিকিউশন তাঁদের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি বা ঊর্ধ্বতনের নির্দেশনার দায়সহ হত্যা, ব্যাপক মাত্রায় পদ্ধতিগত হত্যা, প্ররোচনা, উসকানি এবং অন্যান্য অমানবিক আচরণের অভিযোগ এনেছে। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের নারকীয় বীভৎসতা বাংলাদেশ ও বিশ্ব বিবেককে স্তব্ধ করে দিয়েছিল।
’ তিনি আরো বলেন, ‘সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত চিত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এটি ছিল একটি সমন্বিত নির্মূল পরিকল্পনা।’
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের অনুসন্ধানী দলের প্রতিবেদন এসব অভিযোগের গুরুত্বকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। জাতিসংঘের ১০৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুস্পষ্ট প্রমাণ হাজির করে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে এক হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর মারণাস্ত্রের গুলিতে নিহত হয়েছে।

১১ হাজার সাত শর বেশি মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক স্পষ্টভাবে বলেছেন, সাবেক সরকার বিক্ষোভ দমনে ‘পরিকল্পিত’ ও ‘সমন্বিত কৌশলের’ মাধ্যমে নৃশংসতা চালিয়েছিল।

এসব শুধু পরিসংখ্যান নয়, বরং অপরাধের ভয়াবহতা ও বিস্তৃতিকেও প্রকাশ করে এবং অভ্যুত্থানে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাপ্রবাহের বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণকেও হাজির করে।

অভিযোগগুলো আমলে নেওয়া জুলাই-আগস্টের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ক্ষমতাচ্যুত সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব এবং তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর যাঁরা এসব গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা অপরিহার্য।

এই বিচার শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, রোম সংবিধি এবং ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল আইন অনুসারে বিচারযোগ্য। এটি কেবল ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে না, বরং বাংলাদেশকে অতীতের স্বৈরশাসনের দুঃস্বপ্ন থেকে বের হয়ে গণতান্ত্রিক পথে উত্তরণের পথও দেখাবে।
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন