কয়েক দশক আগেও দেশে নদী ছিল সাত শতাধিক। আরো প্রাচীন তথ্যে দেখা যায়, নদী ছিল হাজারের বেশি। বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হিসাবে কোনো রকমে টিকে আছে ৪৩০টি নদী। বাস্তবে এই সংখ্যা অনেক কম। প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৯৭১ সালে হবিগঞ্জ জেলায় নদী ছিল ৫৫টি। নদী কমিশনের ওয়েবসাইটের সাম্প্রতিক সময়ের তথ্য অনুযায়ী নদী রয়েছে ২৮টি।বাস্তবে নদী হিসেবে চিহ্নিত করা যায় এমন নদীর সংখ্যা ২০টির মতো। এভাবে সারা দেশেই নদীর অপমৃত্যু হচ্ছে। প্রকাশিত আরেক খবরে বলা হয়েছে, যশোরের হরিহর নদের পুরোটাই এখন অসংখ্য পুকুরের সমাবেশ। প্রভাবশালীরা নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে এসব পুকুর বানিয়েছে। পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভরাট প্রক্রিয়াও দ্রুততর হয়েছে। অনেক স্থানে নদীতে চাষাবাদ হচ্ছে। অংশবিশেষ বালু তোলার প্রক্রিয়াও চলছে। কাগজে-কলমে হরিহর নদের দৈর্ঘ্য ৪৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ গড়ে ৭০ মিটার। এটি কপোতাক্ষ নদ থেকে উৎপত্তি হয়ে মণিরামপুর ও সদর উপজেলা হয়ে কেশবপুর উপজেলার আপারভদ্রা নদীতে গিয়ে পড়েছে। বর্তমানে নদীটির ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত অংশই দখল ও ভরাট হয়ে গেছে। প্রস্থও অনেক কমে গেছে। যেটুকু নদী অবশিষ্ট আছে সেটুকুও প্রভাবশালীরা পুকুর বানিয়ে নিজেদের দখলে নিয়েছে।
প্রতিবেদক দুই কিলোমিটার অংশ ঘুরে এ রকম অর্ধশতাধিক পুকুর দেখতে পেয়েছেন। স্থানীয়রা জানায়, নদী ভরাট এবং প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্ষায় তাঁরা দীর্ঘ জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছেন। অনেকের ধারণা, এভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে নদীর অস্তিত্ব পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে।
দখলদারদের দাবি, বন্দোবস্ত নিয়েই তাঁরা নদীর জমি ব্যবহার করছেন। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে নদীর সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। উজানে ১৫ কিলোমিটার খনন করা হয়েছে। বাকি অংশ খননের জন্য প্রকল্প দাখিল করা হয়েছে। খননপ্রক্রিয়া শুরু হলেই সব দখল উচ্ছেদ করা হবে।
যশোর জেলায় নদী ব্যবস্থাপনায় কিছু উল্লেখযোগ্য কাজও হয়েছে। ৬৮ বছর পর প্রায় হারিয়ে যাওয়া বেনাপোলের ঐতিহ্যবাহী হাকর নদ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। দখলমুক্ত করে খননের মাধ্যমে নাব্য করা হয়েছে।আমরা আশা করি প্রকল্প অনুমোদনের আগেই জেলা প্রশাসন ও পাউবোর সম্মিলিত চেষ্টায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে হরিহর নদ অবৈধ দখলমুক্ত করা হবে। পানিপ্রবাহ সচল করা হবে। পাশাপাশি অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।