দেশের ইটভাটাগুলো না কোনো আইনের ধার ধারে, না কোনো নিয়ম-নীতি মানে। আইনে ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বাস্তবে প্রায় শতভাগ ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। আইনে আছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা থাকতে পারবে না।
বাস্তবে বনাঞ্চলের গা ঘেঁষে, এমনকি বনের জায়গা দখল করে ইটভাটা গড়ে তুলতে দেখা যায়। ড্রাম চিমনির ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও বহু ইটভাটায় ড্রাম চিমনি ব্যবহার করা হচ্ছে। আইনে পাহাড় কাটাও নিষিদ্ধ। বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে দিনদুপুরে পাহাড় কেটে মাটি নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। কেটে নেওয়া হচ্ছে ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি।
আর এর আইন মানবে কি, আইনের প্রথম শর্ত অর্থাৎ অনুমোদনই তো নেয় না। বেশির ভাগ ইটভাটা চলে প্রশাসনের অনুমোদন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া। ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ রকম বহু তথ্য উঠে এসেছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সম্প্রতি কয়লার দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে। তাই ইটভাটাগুলো দেখানোর জন্য কিছু কয়লা সেখানে সাজিয়ে রাখে এবং বেশির ভাগ ইটভাটা কাঠ দিয়ে ইট পোড়ায়। যারা এসব অনিয়ম দেখার কথা তারা দেখেও না দেখার ভান করে। সম্প্রতি কক্সবাজারের চকরিয়ার সীমান্তঘেঁষা লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের অবৈধ ইটভাটাগুলো পরিদর্শনে গিয়ে আমাদের প্রতিবেদক দেখতে পান, সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় করে ভাটাগুলোতে মজুদ করা হয়েছে লাখ লাখ টন কাঠ। বন থেকে সেই কাঠ আনতে ব্যস্ত সময় পার করছে অন্তত অর্ধশত ট্রাক। একই সঙ্গে এক্সকাভেটর দিয়ে পাহাড় কাটা হচ্ছে। ট্রাকগুলো সেই মাটি এনে ভাটায় স্তূপ করছে।
অন্য এক খবরে দেখা যায়, হাইকোর্ট গত সোমবার বগুড়া, টাঙ্গাইল, লালমনিরহাট ও ঠাকুরগাঁও জেলার সব অবৈধ ইটভাটা সাত দিনের মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। বন্ধের দুই সপ্তাহের মধ্যে এসব জেলার জেলা প্রশাসককে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। হাইকোর্ট এর আগেও বিভিন্ন জেলার অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং নির্দেশ অনুযায়ী বন্ধও করা হয়েছিল। অভিযোগ আছে, কিছুদিন পরই সেসব ইটভাটায় আবারও ইট পোড়াতে দেখা গেছে। অন্যদিকে কিছু জেলা প্রশাসন অতীতে আন্তরিকতার পরিচয় দিয়ে অবৈধ অনেক ইটভাটা বন্ধও করেছিল। পরে দেখা যায়, সেসব ইটভাটা আদালতে মামলা করে বছরের পর বছর পরিচালিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
নির্মাণসামগ্রী হিসেবে ইটের অনেক বিকল্প রয়েছে। ইট পোড়ানোর অনেক উন্নত পদ্ধতিও এসেছে। আমাদের সেই সব পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। কিন্তু কোনোক্রমেই এভাবে বনাঞ্চল বা প্রকৃতি ধ্বংস করা যাবে না।