আর্সেনিকের বিষক্রিয়া বা আর্সেনিকোসিস রোগটি বাংলাদেশে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ২০১২ সালে পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী দেশে আর্সেনিকোসিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৬৫ হাজার ৯১০ জন। এরপর বড় ধরনের কোনো জরিপ পরিচালিত হয়নি। তাই বর্তমানে দেশে আর্সেনিকোসিস রোগীর সংখ্যা কত তা সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যায় না। প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে প্রায় আট হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ এই রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের রক্ষায় এখনই ব্যাপকভিত্তিক উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।১৯৯০-এর দশক থেকেই দেশে আর্সেনিকের বিষক্রিয়া পরিলক্ষিত হতে থাকে। এই বিষক্রিয়ার মূল উৎস নিরূপিত হয় নলকূপের পানি। ২০০৩ সালে দেশব্যাপী নলকূপের পানি পরীক্ষা করে দেখা যায়, পরীক্ষাকৃত নলকূপের ২৯ শতাংশের পানিতেই মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক রয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) সাম্প্রতিক সময়ের এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে দেশে আর্সেনিকযুক্ত নলকূপের সংখ্যা অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে। ডিপিএইচই ২০২২ সাল পর্যন্ত ৫৪ জেলার মোট ৭২ লাখ নলকূপে আর্সেনিক পরীক্ষা করে। এর মধ্যে ১৩.৯১ শতাংশ নলকূপে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে আর্সেনিক পাওয়া গেছে। এর একটি বড় কারণ আর্সেনিক সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বেড়েছে এবং গভীর নলকূপ বসানোর হার অনেক বেড়েছে। সাধারণত অগভীর নলকূপে আর্সেনিক দূষণ অনেক বেশি হয়।
তবে দেশের কিছু এলাকায় এই হার মারাত্মকভাবে বেশি রকমের। যেমন—গোপালগঞ্জ জেলায় এই হার ৫২.৫৭ শতাংশ, চাঁদপুর জেলায় ৫২.৩৫ শতাংশ. কুমিল্লায় ৪৪.৯১ শতাংশ, সাতক্ষীরায় ৪০.৮৫ শতাংশ।
আর্সেনিক দীর্ঘদিন ধরে শরীরে প্রবেশ করতে থাকলে নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে রয়েছে বমি, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া ইত্যাদি। ক্রমে তা নানা ধরনের রোগের প্রকাশ ঘটাতে থাকে। চর্মরোগ, হাত, পা কিংবা শরীরের অন্যান্য স্থানের ত্বকে ঘায়ের সৃষ্টি হয়।অত্যধিক মাত্রায় আর্সেনিক গ্রহণের কারণে এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, মেটাবোলিক সিনড্রোম, বুদ্ধিবৈকল্য, অ্যাজমা, এমনকি ক্যান্সারের মতো রোগও দেখা দিতে পারে। তাই আর্সেনিকোসিস এবং পরবর্তী সময়ে জটিলতায় মৃত্যুর সংখ্যাও অনেক বেশি হয়।আর্সেনিকোসিসে আক্রান্তদের মধ্যে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের সংখ্যাই বেশি। তাদের পক্ষে সঠিক চিকিৎসা করানোও সম্ভব হয় না। কোনো কোনো পরিবারে দেখা যায়, সবাই এই রোগে আক্রান্ত।
তাই আর্সেনিকোসিস মোকাবেলায় গ্রামাঞ্চলে নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি আর্সেনিকোসিসে আক্রান্তদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা আরো জোরদার করতে হবে।