হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন একসময়ের জনপ্রিয় বলিউড অভিনেতা গোবিন্দ। মাথা ঘোরা, ঝিমুনি ও বুকে ব্যথা নিয়ে হঠাৎই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল ৬১ বছরের অভিনেতাকে।
সম্প্রতি ছাড়া পেয়েই গোবিন্দ জানিয়েছেন, প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরিশ্রম শুরু করেছিলেন তিনি। ফিটনেস বৃদ্ধি করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শারীরিক কসরতও করতেন তিনি। এই বয়সে এত বেশি ব্যায়ামের ধকল সহ্য হয়নি তার শরীরে। তাই আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
শরীরচর্চা ভালো, তবে কোন বয়সে কতটা জরুরি তার সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি আছে। অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ষাটের কোঠায় পৌঁছেও নিয়মিত জিম করে থাকেন। সামাজিক মাধ্যমে অনেককেই স্ট্রেংথ ট্রেনিং কিংবা কার্ডিও করতে দেখা যায়। তবে তা কি সবার জন্যই প্রযোজ্য?
শরীরচর্চা করার আগে ও পরে শরীরকে মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। শুরুর আগে খালি হাতে ওয়ার্ম-আপ করে নিলে শরীরের উষ্ণতা শরীরচর্চার উপযুক্ত হয়। এর পাশাপাশি মূল ব্যায়াম শেষ হয়ে গেলে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে তবেই অন্য কাজ করতে হয়। এতে পেশির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। আর শরীরচর্চা সেরে উঠেই অন্য কাজ শুরু করা বা বেশি পরিশ্রম করতে শুরু করলে হার্টের ওপর চাপ বাড়বে।
সাধারণত ৫০ পেরিয়ে গেলে শরীরে ক্লান্তি আসা স্বাভাবিক। কিন্তু প্রতিদিন নিয়ম মেনে এক ধরনের ব্যায়াম করলে শরীরও ধীরে ধীরে মানিয়ে নেবে। নানা রকম ব্যায়াম একদিনেই শুরু করবেন না। এতে শরীরের ওপর ধকল বাড়বে, বিশেষ করে যারা ৫০ পেরিয়ে গেছেন।
সামাজিক মাধ্যমে দেখে অনেকেই জিমে যাওয়া শুরু করেন। কিন্তু শরীরচর্চা করতে হলে আগে তার নিয়মকানুন কোনো প্রশিক্ষকের কাছ থেকে জেনে নেওয়া উচিত। এর কারণ, সঠিক ভঙ্গি ছাড়া পেশির ওপর প্রয়োজনীয় প্রভাব পড়ে না। বরং ভুল ব্যায়াম করলে চোট-আঘাতের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
আর শরীরচর্চা করলে কিংবা জিমে গিয়ে বেশি সময় কাটালে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন হয়। কারণ ঘুমের মাধ্যমেই দেহ তার প্রয়োজনীয় বিশ্রাম ও শক্তি সংগ্রহ করে থাকে। কিন্তু ঘুম না হলে ক্লান্তি নিয়ে শরীরচর্চার ফল মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন শরীরচর্চা করলে সাধারণত বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। আর যদি পাঁচ থেকে ছয় দিন— টানা শরীরচর্চা করেন, তাহলে একদিন বিশ্রাম নিতেই হবে। কার্ডিও কিংবা স্ট্রেংথ ট্রেনিং করলে তার নিয়ম হলো— সপ্তাহে পাঁচ দিন শরীরচর্চার পর অন্তত দুদিন বিশ্রাম নিতেই হবে। তবে যদি হালকা যোগাসন করেন, তাহলে প্রতিদিনই অল্প অল্প করে করা যায়।
বিশেষ করে কম বয়স থেকে যারা শরীরচর্চা করেন, তারা ভাবেন পঞ্চাশের পরও একইভাবে ব্যায়াম করা যায়। আসলে তা ঠিক নয়; বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শরীরচর্চার ধরন পাল্টাতে হয়, তা না হলে মহাবিপদ।
শরীরচর্চার যেমন ভালো দিক আছে, ঠিক তেমনই প্রয়োজনের অতিরিক্ত করলে তা ক্ষতির কারণও হয়। এমনই জানিয়েছেন ফিটনেস প্রশিক্ষক অনুপ আচার্য। তিনি বলেন, বয়স ৫০ পেরিয়ে গেলে শরীরচর্চা করার সময়ে কিছু নিয়ম মানতে হয়। হঠাৎই একদিন মনে হলো যে ফিটনেস বাড়িয়ে তুলতে ব্যায়াম শুরু করবেন এবং জিমে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কার্ডিও শুরু করলেন— এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
অনুপ আচার্য বলেন, তারকারা যে ধরনের ব্যায়াম করেন, তা তাদের প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিয়েই করে থাকেন। সবার জন্য তা প্রযোজ্য নয়। গোবিন্দ যে ধরনের ব্যায়াম করেছেন, তা হয়তো ওই বয়সে তার শরীরের জন্য ঠিক হয়নি। অত্যধিক পরিশ্রমের কারণে পেশির সক্রিয়তা কমেছে, হরমোনের ক্ষরণে গোলমাল বেঁধেছে। ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
তিনি বলেন, আর গোবিন্দ যে বয়সে গিয়ে ভারি শরীরচর্চা শুরু করেছেন, সেই বয়সে যোগাসনই ভালো ব্যায়াম। আগে কিছু দিন যোগব্যায়াম করে শরীরকে আয়ত্তে নেওয়া উচিত। তারপর ধীরে ধীরে অন্য ব্যায়াম শুরু করা ভালো।
