নাসিম রুমি: চলতি মাসেই জীবনের ৭০তম বছরে পা রেখেছেন ডলি জহুর। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য মায়ের চরিত্রে পর্দায় উঠেছেন তিনি—স্নেহময়ী, দৃঢ়, কিংবা বিধ্বস্ত। প্রতিটি অভিনয়েই ছুঁয়েছেন দর্শকের হৃদয়। তবে এই বয়সে এসে এক গহীন আক্ষেপ জানালেন তিনি—‘মা-খালাদের কোনো মর্যাদা দেয়নি এই ইন্ডাস্ট্রি। পারিশ্রমিকটুকুও ঠিকমতো পাইনি।’
গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে ডলি জহুর বলেন, “আমার সারাজীবন শুনতে হয়েছে, আপনি টাকার জন্য কাজ করেন নাকি? অথচ আমি যে কষ্ট করে কাজ করেছি, সে কষ্ট কেউ বোঝে না। নায়ক-নায়িকারা যেভাবে পারিশ্রমিক পান, মা-খালাদের চরিত্রে আমরা তেমনটা পাই না।”
২০১১ সালে সিনেমা থেকে সরে দাঁড়ান ডলি জহুর। তখনও তার কাছে পাওনা ছিল ৩৪ লাখ টাকা। স্বামী ক্যানসারে আক্রান্ত, টাকার খুব দরকার। কিন্তু সেই সময়ও কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। ডলি বলেন, “কেঁদে কেঁদে বলেছি—আমার কিছু টাকা তুলে দেন, আমি স্বামীকে নিয়ে ব্যাংককে যাব। কিন্তু যাদের দ্বায়িত্ব দিয়েছিলাম, তারাও টাকা দেয়নি। এমনকি যোগাযোগই বন্ধ করে দেয়।”
আরও বলেন, “আমার মা-ও ক্যানসারে মারা গেছেন। জানতাম চিকিৎসার জন্য টাকার বিকল্প নেই। কিন্তু আমি তো এক পয়সাও পাইনি। মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার জন্য পর্যন্ত পুরো টাকাটা মেরে দিয়েছে কেউ কেউ।”
ডলি জহুর আজও কারও নাম বলেননি। কারণ, সেই টাকার আশা ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। তবু এই আক্ষেপ তাকে পোড়ায়—নিজের যোগ্য পারিশ্রমিক না পেয়ে, কান্নাকাটি করেও কিছু না পেয়ে, যখন সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল তখন কেউ পাশে না থাকায়।
২০১১ সালে যিনি চুপচাপ চলে গিয়েছিলেন সিনেমা থেকে, সেই ডলি জহুরকে ২০২১ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়। ‘শঙ্খনীল কারাগার’ ও ‘ঘানি’-তে অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার।