English

21 C
Dhaka
শনিবার, ডিসেম্বর ২০, ২০২৫
- Advertisement -

ইত্যাদি এবার সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামের উলিপুরে

- Advertisements -

নব্বই দশক থেকেই শিকড়ের সন্ধানে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ স্টুডিওর চার দেয়ালের বাইরে গিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আয়োজন করে আসছে এর বিভিন্ন পর্ব। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রত্মসম্পদ, আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রসহ জনজীবনের নানা দিক দর্শকের সামনে তুলে ধরাই এর লক্ষ্য। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে নদীবেষ্টিত পলি গঠিত, ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াইয়া গান সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে খ্যাত সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামে। মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছিল প্রায় দেড় শতবর্ষ প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ‘উলিপুর মহারানি স্বর্ণময়ী স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গণে।

ইত্যাদির ধারণ উপলক্ষ্যে পুরো কুড়িগ্রাম জুড়েই ছিল উৎসবের আমেজ। দুপুরের পর থেকেই অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হতে শুরু করেন দর্শকরা। প্রতিবারের মত এবারও দর্শকদের জন্য ছিলো বিশেষ আমন্ত্রণপত্র। এসব আমন্ত্রণপত্র বিলি করা হয় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে। নির্ধারিত সময়ের আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় অনুষ্ঠান স্থল। দর্শকদের মধ্যে ছিলেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষ। স্থান সংকুলান না হওয়ায় আমন্ত্রিত দর্শক ছাড়াও অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হন তাদের ভালোবাসার অনুষ্ঠান দেখার জন্য। উলিপুরে ধারণ হলেও দর্শকরা আসেন কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলা রংপুর, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা থেকেও। স্থানীয়রা জানান, ইতঃপূর্বে কুড়িগ্রামে কখনও কোনো অনুষ্ঠানে এত দর্শক সমাগম হয়নি। অনেক দর্শকই আশেপাশের বিভিন্ন  স্থাপনার ছাদ, গাছ ও রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভ্যাপসা গরম উপেক্ষা করেও দীর্ঘ সময় ধরে অবাক বিস্ময়ে উপভোগ করেছেন তাদের প্রিয় অনুষ্ঠান ইত্যাদির ধারণ।

উল্লেখ্য বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী লোকসংগীত ভাওয়াইয়া কুড়িগ্রাম অঞ্চলের মানুষের প্রাণের গান। তাই ভাওয়াইয়া লোকসংগীত সমৃদ্ধ কুড়িগ্রামে ধারণকৃত ইত্যাদির এই পর্বে বারে বারে উঠে এসেছে জীবনঘনিষ্ঠ এই গানের সাথে কুড়িগ্রামের সম্পৃক্ততা, এই গানের ঐতিহ্য, শিল্পী ও ইতিহাসের কথা। সেটা কখনও নাটিকায়, প্রতিবেদনে, গানে এবং ইত্যাদির নিয়মিত পরিবেশনায়।

এবারের অনুষ্ঠানে গান রয়েছে দুটি। অনুষ্ঠানের শুরুতেই কুড়িগ্রামের কৃষ্টিকথা ও ইতিহাসগাঁথা নিয়ে রয়েছে মনিরুজ্জামান পলাশের কথায় একটি পরিচিতিমূলক গানের সঙ্গে নৃত্য। পরিবেশন করেছেন  স্থানীয় অর্ধশতাধিক নৃত্যশিল্পী। নাচটির কোরিওগ্রাফি করেছে এস কে জাহিদ, কণ্ঠ দিয়েছেন রাজিব ও তানজিনা রুমা। গানটির সুর করেছেন হানিফ সংকেত এবং সংগীত আয়োজন করেছেন মেহেদী। চিলমারী বন্দরকে নিয়ে ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাসউদ্দীনের গাওয়া বিখ্যাত গান ‘ও কি গাড়িয়াল ভাই’ নতুন করে গেয়েছেন এই প্রজন্মের জনপ্রিয় লোকসংগীত শিল্পী সালমা আক্তার ও উত্তরাঞ্চলের ভাওয়াইয়া শিল্পী পূর্ণচন্দ্র রায়। সংগৃহীত কথায় গানটির সুরও করেছিলেন আব্বাসউদ্দীন আহমেদ, ইত্যাদির জন্য গানটির সংগীতায়োজন করেছেন মেহেদী।

দর্শকপর্বের নিয়ম অনুযায়ী ধারণ স্থান কুড়িগ্রামকে ঘিরে করা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উপিস্থিত দর্শকের মাঝখান থেকে ৪ জন দর্শক নির্বাচন করা হয়। ২য় পর্বে নির্বাচিত দর্শকদের দিয়ে সুরের শহর কুড়িগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াইয়া গানকে নিয়ে একটি পর্ব করা হয়। বহুশ্রুত হৃদয়ছোঁয়া কয়েকটি ভাওয়াইয়া গান নিয়ে করা দর্শক পর্বটি ছিল বেশ উপভোগ্য। এই পর্বে বাদ্যযন্ত্র সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ ভাওয়াইয়া একাডেমির যন্ত্রশিল্পীবৃন্দ।

শিকড় সন্ধানী ‘ইত্যাদি’ সবসময়ই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচার বিমুখ, জনকল্যাণে নিবেদিত মানুষদের তুলে ধরার পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের অচেনা-অজানা বিষয় ও তথ্যভিত্তিক শিক্ষামূলক প্রতিবেদন প্রচার করে আসছে। আর সেই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্বেও রয়েছে কয়েকটি অনবদ্য প্রতিবেদন। রয়েছে কুড়িগ্রাম জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্যসহ এর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, মহারাণী স্বর্ণময়ী, মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর বাড়ি, বীর প্রতীক তারামন বিবি, মুক্তিযুদ্ধে কুড়িগ্রাম, চিলমারী নদী বন্দরসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর একটি তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন। ভাওয়াইয়া চর্চা, প্রচার-প্রসার এবং নতুন প্রজন্মকে ভাওয়াইয়া সংগীতের তালিম দেয়ার লক্ষ্যে প্রখ্যাত ভাওয়াইয়া শিল্পী ভূপতি ভূষণ বর্মা প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ভাওয়াইয়া একাডেমি ও ভাওয়াইয়া গান সম্পর্কে রয়েছে একটি বিশেষ প্রতিবেদন। উল্লেখ্য ভাওয়াইয়া গানকে অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য যাদের অবদান রয়েছে তাদেরই একজন ভূপতি ভূষণ বর্মা। এই পর্বে শিল্পী ভূপতি ভূষণ বর্মা ও তার শিক্ষার্থীরা একটি ভাওয়াইয়া গানও পরিবেশন করেন। ২০১১ সালের জুলাই মাসে প্রচারিত ইত্যাদিতে কুড়িগ্রামের একজন কর্মউদ্যোগী যুবক আব্দুল কাদেরের উপর একটি প্রতিবেদন প্রচার করা হয়েছিল। এবারের ইত্যাদিতে তার উপর রয়েছে একটি ফলোআপ প্রতিবেদন। নদ-নদীবেষ্টিত জেলা কুড়িগ্রামে প্রায় চার শতাধিক চর রয়েছে। এই চর ও চরাঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা ও সম্ভাবনা নিয়ে রয়েছে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য কুড়িগ্রামের চিলমারীতে রিকতা আখতার বানু নির্মিত ‘রিকতা আখতার বানু (লুৎফা) বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়’ এর উপর রয়েছে একটি মানবিক প্রতিবেদন। এবারে বিদেশি প্রতিবেদনে দেখানো হবে আধুনিক স্থাপত্যশৈলী আর অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর সিঙ্গাপুরের দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ-সেন্ট জনস আইল্যান্ড ও রহস্যময় কুসু দ্বীপ।

থাকছে কাশেম টিভির সাংবাদিকের সঙ্গে নাতির মজার আলাপন, যা দর্শককে যেমন হাসাবে, তেমনি ভাবনাতেও ফেলবে। এছাড়াও ইত্যাদির নিয়মিত আয়োজন চিঠিপত্র পর্ব ছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু সামাজিক অসংগতি ও সমসাময়িক প্রসঙ্গনির্ভর তীর্যক নাট্যাংশ। উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে, বিজ্ঞের ভাব ধরা অজ্ঞ, ভাইরাল ভাইরাস, ঝাপসা ব্যবসা, জটাক্রান্ত রিকশাচালকের ভারাক্রান্ত অভিব্যক্তি, দায়বোধ বনাম আয়বোধ, আগে গুণবিচারি পরে দর্শনধারী, দুরন্ত কথকের একান্ত সচিব, উপহার উৎপাতসহ বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ।

ইত্যাদিতে উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন-সোলায়মান খোকা, আব্দুল আজিজ, আবদুল্লাহ রানা, সুভাশিষ ভৌমিক, জিল্লুর রহমান, মুকিত জাকারিয়া, আমিন আজাদ, শাহেদ আলী, আশরাফুল আলম সোহাগ, তারিক স্বপন, নিপু, আবু হেনা রনি, শাওন মজুমদার, সাবরিনা নিসা, জামিল হোসেন, রিমু রোজা খন্দকার, সাদিয়া তানজিন, সুজাত শিমুল, হানিফ পালোয়ান, নজরুল ইসলাম, সূচনা শিকদার, রাজীব সালেহীন, বেলাল আহমেদ মুরাদসহ আরো অনেকে। বরাবরের মত এবারও ইত্যাদির শিল্প নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন ইত্যাদির নিয়মিত শিল্প নির্দেশক মুকিমুল আনোয়ার মুকিম।

ইত্যাদির এই পর্বটি আগামী ৩১ অক্টোবর, শুক্রবার-রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর প্রচারিত হবে বাংলাদেশ টেলিভিশনে। ইত্যাদি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/3pru
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন