মুনমুন: “আমি যখন পৃথিবীতে আসিনি, তখনই আমার মা চিরস্মরণীয় নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ভাইয়ের সিনেমা ও নাটক হলে গিয়ে দেখতেন। তার সুদৃঢ় অভিনয়, অনন্য ব্যপারদর্শিতা এবং চলচ্চিত্রে তার অবদানের গল্প মা সবসময় আমাকে শুনাতেন।
পরে ভাগ্যক্রমে আমি মিডিয়াতে যুক্ত হই এবং এই মহানায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধে সিনেমা করি। তখনই আমার মা কাঞ্চন ভাইকে এই ঘটনা শেয়ার করেন।
কাঞ্চন ভাই বিষয়টি শুনে ভীষণ অবাক হন এবং তার অসাধারণ হাস্যরসের মাধ্যমে আমাকে বললেন—
‘মুনমুন, এবার তুমি দ্রুত বিয়ে করো, তোমার সন্তান হোক, আমি তোমার সন্তানের সঙ্গে ও সিনেমা করবো।’
এই কথাটি কেবল একটি মজার মুহূর্ত নয়, বরং প্রকাশ করে কাঞ্চন ভাইয়ের উদারতা, আন্তরিকতা এবং সহমর্মিতার গভীরতা। তার চরিত্রের এই দিকই তাকে চলচ্চিত্র অঙ্গনের একটি চিরস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তুলেছে। এই ছোট গল্পই দেখায় যে, তার প্রিয় শিল্পী এবং সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কতটা আন্তরিক ও গভীর।
সেটি আমার মনে আজও চিরকাল অম্লান স্মৃতি হয়ে আছে—একজন নায়ক শুধু পর্দায় নয়, বাস্তব জীবনেও যে কতটা উজ্জ্বল মানবিকতা, সৌজন্য এবং আন্তরিকতা প্রদর্শন করতে পারেন, তার প্রমাণ এটি।”
কাঞ্চন ভাই ছিলেন গুণী শিল্পী, যার ক্রেজ ও ভক্তি দীর্ঘ সময় ধরে চলচ্চিত্রে বিরাজমান। যা অন্য শিল্পীদের ক্ষেত্রে খুব কমই দেখা যায়।
তিনি ভীষণ নামাজি মানুষ। শুটিং চলাকালীনও তাকে নামাজ পড়তে দেখেছি। অবসর সময়ে সবসময় তসবিহ ও কোরআন পাঠ করতেন। তার ধর্মভীরু চরিত্র আমাকে সত্যিই মুগ্ধ করেছে।
ইলিয়াস কাঞ্চন ভাই ছিলেন এক অসাধারণ মানুষ। সিনেমার সেটে তিনি সবসময় আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন, যত্ন নিয়েছেন যেন আমি স্বচ্ছন্দে অভিনয় করতে পারি। আমাদের একসাথে কাজের সময়টা ছিল খুবই উপভোগ্য।
শুটিং চলাকালীন কোনো চ্যালেঞ্জিং দৃশ্যে আমি দ্বিধায় পড়লে তিনি বলতেন—‘চেষ্টা করো, তুমি পারবে।’ এই কথাগুলো আমাকে ভীষণ আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে।
সিনেমার পর্দায় তিনি নায়ক, কিন্তু বাস্তব জীবনে তিনি সত্যিকারের নায়ক—যিনি শুধু অভিনয়ে নয়, সামাজিক দায়িত্ববোধেও অনন্য। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের জন্য তার অবদান আমাদের সবার জন্য গর্বের।
ইলিয়াস কাঞ্চনের অসুস্থতার খবর শুনে আমি সবার কাছে দোয়া চাইছি—আল্লাহ যেন তাকে দ্রুত সুস্থ্য করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনেন।”