এ কে আজাদ: মন্টু। সিরাজুল হক মন্টু। অভিনেতা। তিনি সব ধরণের চরিত্রেই অভিনয় করেছেন। তবে কৌতুকাভিনেতা হিসেবেই অধিক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। ‘কইনচাইন দেহি’ খ্যাত গুণী কৌতুক অভিনেতা সিরাজুল হক মন্টু’র মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৩ সালের ৮ জুন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়, মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। প্রয়াত এই অভিনেতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
মন্টু (সিরাজুল হক মন্টু) ১৯৩৮ সালে, ময়মনসিংহ শহরের আকুয়াতে, জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৪৭ সালে, ময়মনসিংহের স্থানীয় ‘সিটি ক্লাব’ থেকে ‘অমরাবতী মঞ্চে’ মঞ্চায়িত হয় ‘টিপু সুলতান’ নাটক। সেই নাটকে টিপুর ছোট ছেলে ‘মোয়াজুদ্দিন’-এর চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে, মাত্র নয় বছর বয়সে সিরাজুল হক মন্টুর অভিনয় জীবন শুরু হয়।
তাঁর অভিনয় প্রতিভার দরুণ অল্প সময়ের মধ্যে ময়মনসিংহের অন্যতম বৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী নাট্যসংগঠন ‘অমরাবতী নাট্য মন্দির’-এর সদস্য করা হয় তাঁকে। সদস্য হওয়ার পরবর্তী বছরগুলিতে তিনি, তাদের প্রযোজিত অনেক নাটকে অভিনয় করেন। এক সময় মঞ্চনাটকের অভিনেতা হিসেবে স্থানীয়ভাবে খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন মন্টু। পরবর্তিতে তিনি ঢাকায় চলে আসেন।
ঢাকায় এসে সিরাজুল হক মন্টু মঞ্চের পাশাপাশি বেতার ও টেলিভিশনে অভিনয় শুরু করেন। টেলিভিশনের বহু নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।
আশির দশকে বিটিভিতে প্রচারিত ফজলে লোহানীর জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘যদি কিছু মনে না করেন’-এ অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান তিনি । এই অনুষ্ঠানে সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্ব ছিল, লালু ও মন্টুর- ‘আচ্ছা কইনচাইন দেহি’, এই পর্বের, এই ‘কইনচাইন দেহি’ সংলাপটির মাধ্যমে, এ এফ এম আবদুল আলী লালু ও সিরাজুল হক মন্টু কৌতুক অভিনেতা হিসেবে সেই সময়ে খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন।
পরবর্তিতে তিনি, হানিফ সংকেতের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তেও দীর্ঘদিন পার্ফরমেন্স করেছেন।
সিরাজুল হক মন্টু চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে আছে-
মানুষের মন, দর্পচূর্ন, দুটি মন দুটি আশা, সুজন সখী, কি যে করি, অনুভব, অমর প্রেম, অশিক্ষিত, মাটির ঘর, ছুটির ঘণ্টা, বিষকন্যার প্রেম, প্রভৃতি।
পারিবারিক জীবনে সিরাজুল হক মন্টু তাঁর নাটকের এক সময়ের সহ-অভিনেত্রী শান্তা হককে বিয়ে করেন। তাদের দু’ মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলে-মেয়েরা হলো, মিতা, রিতা ও রিন্টু।
ময়মনসিংহেরই একজন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী মোহাম্মদ ছাইদুল ইসলাম, গুণী অভিনেতা সিরাজুল ইসলাম মন্টুকে নিয়ে, ‘নোভিস ফাউন্ডেশন’-এর প্রযোজনায় একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এই তথ্যচিত্রে সিরাজুল ইসলাম মন্টুর কর্মময় জীবন সম্পর্কে নানান তথ্য তুলে ধরা হয়েছে ।
সিরাজুল হক মন্টু সব ধরণের চরিত্রেই অভিনয় করেছেন।তবে কৌতুকাভিনেতা হিসেবেই তিনি অধিক পরিচিত ও জনপ্রিয় ছিলেন। গুণী এই অভিনেতাকে দর্শকরা যুগ যুগ ধরে মনে রাখবেন।