নাসিম রুমি: ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবির আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে একটি লাইভ করেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ। ৪ আগস্ট বিকালে ধানমন্ডিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্বৃত্তের ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনায় ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন, আমরা যদি ১৯৫২ সালে পেরে থাকি, ১৯৭১ সালে পেরে থাকি তবে এবারও পারব, আপনারা ছাত্রদের পাশে দাঁড়ান।
এসব কথা বলার কারণে তাকে রাজাকার বলা হয়? তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছোট করা ও নিচে নামানোর অভিযোগ তুলে তাকে আটক করা হয়? ২০১৮ সালের ২১ আগস্ট ৫ হাজার টাকা মুচলেকা দিয়ে সিএমএম আদালত হতে জামিনে মুক্তি পান নওশাবা।
এই অত্যাচার নির্যাতন ও আয়নাঘরের বিষয় এতদিন চুপ থাকলেও সম্প্রতি অন্যদের মতো মুখ খুলেন নওশাবা। বলেন, বন্দি থাকা কয়দিনে তার শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক অবস্থার অনেক অবনতি হয়।
এই কয়েক দিন তাকে কালো কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। ‘আয়নাঘর’ কিনা সেটা তখন তিনি জানতেন না। তবে কালো কাপড় দিয়ে তার চোখটা বাঁধা ছিল। চোখ বাঁধা অবস্থায় ২১ দিন সব করতে হয়েছিল তাকে।
এরপর নওশাবা জামিনে ফিরে আসলেও তার জীবন আর আগের মতো স্বাভাবিক ছিল না। আয়নাঘর থেকে বের হয়ে তাকে থাকতে হয় ছয় মাস রিহ্যাবে। নিজের মেয়েকেই চিনতে পারতেন না তিনি। ২০১৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত একমাত্র কন্যাকে নিয়ে আছেন নওশাবা। তার সংসার টেকেনি। এ সময় তাকে কেউ বাড়ি ভাড়া দিতে চায়নি। গত ছয় বছরে ২০ বারের ওপরে বাসা বদলেছেন। বন্ধুর নামে বাসা ভাড়া নিয়ে বোরকা পড়ে বাসায় ঢুকতেন নওশাবা।
নিজের বাড়িতেও জায়গা হয়নি তার, কারণ ভাই ও আত্মীয়স্বজনরা নিরাপদ মনে করেনি তাকে আশ্রয় দেওয়া। উঠতি এই শিল্পীর ক্যারিয়ারও পিছিয়ে পরেন। সেই সময়ের দুর্বিষহ পরিস্থিতি অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছেন নওশাবা। ফিরেছেন কাজে।
তবে সে স্মৃতি মনে পড়লে এখনো আঁতকে উঠেন এই অভিনেত্রী। অনেকেই নওশাবাকে বিদেশে চলে যেতে বলেছিলেন, পরিবারের সদস্যসহ অনেক আত্মীয় বিদেশে থাকলেও তিনি যেতে রাজি হননি। তিনি বলেন, আমার জিদ ছিল। আমি দেশ ছাড়ব না। আমি জানতাম, এমন দিন আসবে আমি বলতে পারব- আমার দোষ ছিল না, আমি তো চোর, রাষ্ট্রদ্রোহী বা রাজাকার নই।
আমি বাংলাদেশি, আমার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। আমি নিতান্তই একজন শিল্পী। সেই দিনটা চলে এসেছে। আমি একাই লড়াই করে গেছি। কারও করুণা চাইনি। আমার মেধা থাকলে কাজ পাব, না থাকলে পাব না। কিন্তু কোনো এক সময় আমি শিক্ষার্থীদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলাম বলে আমার ক্যারিয়ার ধংস নামবে। আমাকে কালো তালিকায় রাখা হবে এটা মানতে পারব না। এমনটা আর কারো সঙ্গে যেন না হয়।